সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
27.দাঁড়াবার জায়গা-২৭/সমর দেব

27.দাঁড়াবার জায়গা-২৭/সমর দেব

26.দাঁড়াবার জায়গা-২৬/সমর দেব

26.দাঁড়াবার জায়গা-২৬/সমর দেব

25.দাঁড়াবার জায়গা-২৫/সমর দেব

25.দাঁড়াবার জায়গা-২৫/সমর দেব

24.দাঁড়াবার জায়গা-২৪/সমর দেব

24.দাঁড়াবার জায়গা-২৪/সমর দেব

23.দাঁড়াবার জায়গা-২৩/সমর দেব

23.দাঁড়াবার জায়গা-২৩/সমর দেব

22.দাঁড়াবার জায়গা-২২/সমর দেব

22.দাঁড়াবার জায়গা-২২/সমর দেব

21.দাঁড়াবার জায়গা-২১/সমর দেব

21.দাঁড়াবার জায়গা-২১/সমর দেব

20.দাঁড়াবার জায়গা-২০/সমর দেব

20.দাঁড়াবার জায়গা-২০/সমর দেব

19.দাঁড়াবার জায়গা-১৯/সমর দেব

19.দাঁড়াবার জায়গা-১৯/সমর দেব

18.দাঁড়াবার জায়গা-১৮/সমর দেব

18.দাঁড়াবার জায়গা-১৮/সমর দেব

17.দাঁড়াবার জায়গা-১৭/সমর দেব

17.দাঁড়াবার জায়গা-১৭/সমর দেব

16.দাঁড়াবার জায়গা-১৬/সমর দেব

16.দাঁড়াবার জায়গা-১৬/সমর দেব

15.দাঁড়াবার জায়গা-১৫/সমর দেব

15.দাঁড়াবার জায়গা-১৫/সমর দেব

14.দাঁড়াবার জায়গা-১৪/সমর দেব

14.দাঁড়াবার জায়গা-১৪/সমর দেব

13.দাঁড়াবার জায়গা-১৩/সমর দেব

13.দাঁড়াবার জায়গা-১৩/সমর দেব

12.দাঁড়াবার জায়গা-১২/সমর দেব

12.দাঁড়াবার জায়গা-১২/সমর দেব

11.দাঁড়াবার জায়গা-১১/সমর দেব

11.দাঁড়াবার জায়গা-১১/সমর দেব

10.দাঁড়াবার জায়গা-১০/সমর দেব

10.দাঁড়াবার জায়গা-১০/সমর দেব

9.দাঁড়াবার জায়গা-৯/সমর দেব

9.দাঁড়াবার জায়গা-৯/সমর দেব

8.দাঁড়াবার জায়গা-৮/সমর দেব

8.দাঁড়াবার জায়গা-৮/সমর দেব

7.দাঁড়াবার জায়গা-৭/সমর দেব

7.দাঁড়াবার জায়গা-৭/সমর দেব

6.দাঁড়াবার জায়গা-৬/সমর দেব

6.দাঁড়াবার জায়গা-৬/সমর দেব

5.দাঁড়াবার জায়গা-৫/সমর দেব

5.দাঁড়াবার জায়গা-৫/সমর দেব

4.দাঁড়াবার জায়গা-৪/সমর দেব

4.দাঁড়াবার জায়গা-৪/সমর দেব

3.দাঁড়াবার জায়গা-৩/সমর দেব

3.দাঁড়াবার জায়গা-৩/সমর দেব

2.দাঁড়াবার জায়গা-২/সমর দেব

2.দাঁড়াবার জায়গা-২/সমর দেব

1.দাঁড়াবার জায়গা-১/সমর দেব

1.দাঁড়াবার জায়গা-১/সমর দেব

05-December,2022 - Monday ✍️ By- সমর দেব 387

দাঁড়াবার জায়গা-১২/সমর দেব

দাঁড়াবার জায়গা/বারো
সমর দেব
~~~~~~~~~~~~~

প্রতিদিন স্কুলে যেতে এত ভালো লাগতো যে, ছুটির দিনগুলো যেন কাটতেই চাইতো না। প্রথম দিকে স্কুলের ভবনগুলোর দেওয়াল ছুঁয়ে ছুঁয়ে যেন অনুভব করতে চাইতাম স্কুলের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য, শিক্ষার বিপুল গৌরব। ১৮৬১ সালে, যেবছর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মেছেন সেবছরই জেনকিন্স স্কুলের যাত্রা শুরু। জেনকিন্স স্কুলে অনেক ভবন, অসংখ্য ঘর। কিন্তু সবচেয়ে আকর্ষণীয় লাল ভবনটি। সেখানেই হেডস্যরের অফিস, টিচার্স কমন রুম, হলঘর, লাইব্রেরি। পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত এই লালবাড়ির পূর্ব প্রান্তের শেষ ঘরে আরবির স্যর, আমরা বলতাম মৌলবি স্যর, ক্লাস নিতেন। আমাদের ক্লাসের একজন, হামিদুল পড়তো আরবি। আমরা বাকি সবাই সংস্কৃত। আমরা যখন সংস্কৃত ক্লাসে তখন হামিদুল আরবি ক্লাসে। সেই লালবাড়ি যেন তীব্র অহঙ্কারে এখনও আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়। এই লালবাড়ি বিংশ শতাব্দীতে নির্মিত। অন্য ভবনগুলি আরও পরবর্তীতে। আমাদের সময়ে জেনকিন্স স্কুলের পেছনে, উত্তরদিকে ছিল চন্দন দীঘি। সেখানে ফুটে থাকতো অজস্র পদ্মফুল। পরে, দেখেছি, চন্দন দীঘি একটু একটু করে ভরাট হচ্ছে, দখল হচ্ছে। সম্প্রতি তার অবস্থা কীরকম দাঁড়িয়েছে জানি না। আদৌ কি তার অস্তিত্ব আছে?

প্রতিদিন স্কুল শুরু হবার আগে আমরা প্রার্থনা করতাম। আমরা কখনও ‘জনগণমন অধিনায়ক’ যেমন গাইতাম, তেমনই একেকদিন গাইতাম, ‘মোদের জেনকিন্স স্কুল, বিহার তীর্থে অমর কীর্তি, বাণীর পুণ্য দেউল’...। এই গানটি ছিলো আমাদের নিজস্ব স্কুল সংগীত। আমাদের স্কুলের ইউনিফর্ম ছিলো সবুজ-সাদা। এই ইউনিফর্ম নিয়ে আমাদের অহঙ্কার ছিলো। কথায় কথায় অন্যান্য স্কুলের সঙ্গে তুলনা টানতাম আমরা। ক্রিকেটে আমাদের স্কুলের সাফল্য ছিলো সবচেয়ে উজ্জ্বল। ফুটবলে আমরা খানিকটা পিছিয়ে থাকতাম। কিন্তু, পড়াশুনোয় জেলার সর্বকালের সেরা আমাদের স্কুল। এই স্কুলের অসংখ্য প্রাক্তনী, নানা ক্ষেত্রে, দেশে-বিদেশে দেড়শো বছরে কত সাফল্য অর্জন করেছেন। এই স্কুলের কত শিক্ষক কিংবদন্তি হয়ে উঠেছেন নানা সময়ে। সেসব নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হওয়া উচিত। এধরনের কোনও গবেষণা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

ক্লাস সেভেনে পড়তেই অবশ্য এমন একটা ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলাম যেটা আজীবন মনে থাকবে। মনে আছে, একদিন প্রথম ক্লাসেই এসে হাজির হলেন একজন প্রবীণ পিয়ন। তাঁর নাম ইন্দ্রা, আমরা ছাত্ররা সকলেই তাঁকে বলতাম ইন্দ্রাভাই। তাঁর এক ছেলেকেও আমাদের স্কুলেই কাজ করতে দেখেছি, তার নাম আজ আর মনে নেই। তো, ইন্দ্রাভাইয়ের হাতে একটা লম্বা খাতা। তিনি এসে আমাদের ক্লাস টিচারকে কিছু বললেন। তারপর ইন্দ্রাভাই প্রতিটি বেঞ্চের সামনে এসে খাতাটা মেলে ধরে সবাইকে পরপর তাতে নাম লিখতে বললেন। আমরা সবাই একে একে নিজেদের নাম লিখলাম। সেদিনই টিফনের সময় ব্যাপারখানা চাউর হলো। তফসিলি ছাত্রদের জন্য মাসিক স্টাইপেন্ডের ব্যবস্থা ছিলো। সেই টাকা প্রতি মাসে আসতো না, বরং কয়েকমাস পরপর আসত। তফসিলি সম্প্রদায়ের এক ছাত্র কোনও এক কৌশলে কয়েকজনের স্টাইপেন্ডের টাকা একাই তুলে নিয়েছে! দেখা গেলো, সেই ছাত্র আমাদের ক্লাসেরই একজন (সেই ছাত্র বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও বিভাগে উচ্চপদে আসীন। সঙ্গত কারণেই তার নাম প্রকাশ করছি না)! ধরা পড়ার পর তার কাছ থেকে সম্ভবত পুরোটাই, তখনই তার পরিমাণ বেশ কয়েক হাজার টাকা, উদ্ধার করা হয়েছিলো। এঘটনার পর আমরা সকলেই তাকে এড়িয়ে চলতাম। সে-ও এসব নিয়ে মোটেই ভাবিত ছিলো না। শিক্ষকরা বা হেডস্যর তাকে কী বলেছিলেন, অথবা তার আদৌ কোনও শাস্তি হয়েছিল কিনা এসব আমরা জানতে পারিনি কখনই। পরে, একসময় আমরা ভুলেও গিয়েছিলাম পুরো ঘটনাটা। সম্প্রতি, মাত্র কয়েক বছর আগে, সোসাল ওয়েবসাইটে সে আমাদের কাউকে কাউকে ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠিয়েছিল। তারপর, মেসেঞ্জারে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছিলো সে এখন উত্তরবঙ্গের একটি শহরে ‘অমুক’ বিভাগে, ‘অমুক’ পদে আসীন। ‘অমুক’ শহরের ‘অমুক’ পাড়ায় তার চারতলা বাড়ি। মেয়ের বিয়ে দিয়েছে কোটি টাকা খরচ করে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তার সঙ্গে সহজ হতে পারিনি। সে ফোন নম্বর চেয়ে দুয়েকবার ফোনও করেছে। তারপরও স্বাভাবিক হতে পারিনি। সে-সময় বর্তমানে কলকাতাবাসী জ্যোতির্ময় জানালো, তাকেও ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠিয়েছে একজন, এবং তার নাম...। সে জানতে চায়, এ-ই সেই কিনা। তার কথা আমার মনে আছে কিনা সে জানতে চাইলো। আমি বললাম, সব মনে আছে। জ্যোতির্ময়ের কাছাকাছি আরও কয়েকজনের কাছেও রিকোয়েস্ট গিয়েছিল। কেউই তার অনুরোধে সাড়া দেয়নি! কিছুদিন পর তার কথা হঠাৎ মনে হতেই আমার খুব মন খারাপ হয়ে গেলো। পাপী নয়, পাপকে ঘৃণা করো - জাতীয় কোনও মহত্বের ব্যাপার নয়। খারাপ লেগেছে একারণেই যে, সে কী এত বছর বাদেও সেরকমই অপরাধীমনস্ক রয়ে গেছে? নিশ্চিত করে জানি না। বন্ধুত্বের অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়ে তাকে আমরা হয়তো আহত করেছি। পরে, মনে হয়েছে, যে চাকরি সে করে সেখানে অপরাধের সুযোগ প্রায় অবাধ। সে তার জীবনযাপন ইত্যাদি সম্পর্কিত যেসব খবর নিজেই দিয়েছে তাতে বাঁহাতের সক্রিয়তার আভাস মোটেই দুর্লক্ষ্য ছিলো না। অতএব, সে আজীবন অপরাধী, নিশ্চিত। এসব ভেবে পরে মনে হয়েছে তার প্রতি কোনও অন্যায় করা হয়নি। কৈশোরের সহপাঠীদের কাছে এটাই তার প্রাপ্য। কেউ তার ‘বন্ধু’ হতে রাজি হয়নি!   

সেবছর, আমরা সেভেনে পড়াকালেই, জেনকিন্স স্কুলের ইতিহাসে ভয়ঙ্করতম ঘটনাটি ঘটে যায়। সময়টা, আগেই বলেছি, অস্থির ছিল। আর্থ-রাজনৈতিক-সামাজিক ক্ষেত্রের সেই অস্থিরতা প্রতিদিনই প্রকাশ পেতো নানা ভাবে। রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে, স্কুল-কলেজে, সব ধরনের আড্ডায় উঠে আসতো সময়ের কটু ঘ্রাণের আভাস। সকলেই কংগ্রেসের গুন্ডা ছিলো না, আবার সকলেই বামপন্থী বা বিদ্রোহী টাইপের ছিলো না। কিন্তু চরম অসাম্য, বেকারত্ব, সামাজিক নীতিহীনতা, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে যুদ্ধের সময়ে আগত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর স্রোত এবং তাদের অনেকেরই স্বদেশে ফিরে না যাওয়া, অনাহার, ক্ষুধা, পুলিশি অত্যাচার, ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সীমাহীন ঔদ্ধত্য, অসভ্যতা-সব মিলিয়ে এক ভয়ানক পরিস্থিতি। রাজনীতির লুম্পেনাইজেশন তখন বেশ মজবুত ভিতের ওপরে দাঁড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে, যেটা পরবর্তীতে দিনের পর দিন আরও ভয়াল চেহারা নেবে।

এই রকম এক সামাজিক প্রেক্ষাপটে চরম অস্থিরতা জনজীবনকে শ্বাসরুদ্ধকর এক অবস্থার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের প্রেক্ষিতে যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল, যুদ্ধ মিটে গেলেও, তখনও তার রেশ দিব্যই চলছিল। ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সমালোচক বা বিরোধীরা নিজের ঘরেও নিরাপদ ছিলো না। দমবন্ধ করা এক পরিস্থিতি বিস্ফোরণের অপেক্ষায় প্রহর গুনছিল। তখন রাস্তাঘাটের দখল নিয়েছিলো কংগ্রেসের গুন্ডা বাহিনী, অরাজনৈতিক অপরাধী গ্যাং এবং পুলিশ-সিআরপি। সেরকম এক মাহেন্দ্রক্ষণে ঘটনাটি ঘটেছিল। তখন টিফিন পিরিয়ড শেষ হয় হয়। অনেক ছাত্রই স্কুলের দুদিকের গেটে ভিড় জমিয়েছে এটা সেটা কিনতে। স্কুলের পশ্চিমদিকে দুটো গেট। ছোট গেটের মুখেই পরিমল বেকারি। সেখানে দুপুরের দিকে গরম পাউরুটি পাওয়া যায়। অনেকেই গরম পাউরুটির লোভে গেটের বাইরে চলে গিয়েছিল। দোকানটা ছিল রাস্তার উল্টোদিকে। তখন জেলখানা থেকে বেরিয়ে সোজা রাস্তা ধরে আদালতের দিকে যাচ্ছিল সিআরপির একটি ভ্যান। সম্ভবত কিছু কয়েদিকে আদালতে পেশ করার জন্যই তারা যাচ্ছিলো। সিলভার জুবিলি রোড এবং এমজেএন রোডের সংযোগস্থলে একটি বাসস্টপেজ ছিল। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের একটি বাস তখন সেখানে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র। বাসের পেছন দিকে এসে জোর ধাক্কা মারে সিআরপির ভ্যানটি। তারপরই ভ্যান থেকে নেমে আগ্নেয়াস্ত্রধারী সিআরপি জওয়ানরা বাসের ড্রাইভার, কন্ডাক্টর, যাত্রীদের বেধড়ক মারতে শুরু করে। কাউকে কাউকে মাথায় রাইফেল ঠেকিয়ে হুমকি দেয়। অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। মুহূর্তেই সেখানে ভিড় জমে যায়। স্কুলের ছোট গেটের কাছাকাছি এসব দেখেই ছাত্রদের স্কুলের ভেতরে নিয়ে আসতে ছুটে যান আমাদের শিক্ষক শঙ্কর চক্রবর্তী। তিনি ছাত্রদের স্কুলের ভেতরে ঢোকাচ্ছিলেন। সেই সময়ে সিআরপি জওয়ানরা তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে। অনেক ছাত্র তাতে গুরুতর আহত হয়। সিআরপির গুলিতে অকুস্থলেই রক্তাক্ত হয়ে লুটিয়ে পড়েন শঙ্করবাবু। সে এক ভয়ানক পরিস্থিতি। তখন আমাদের স্কুলের সর্বোচ্চ ক্লাস ছিলো ইলেভেন। ইলেভেনেই ফাইনাল পরীক্ষা হতো। এই ভয়ানক ঘটনার পরই ইলেভেনের তো বটেই এইট, নাইন, টেনের ছেলেরাও তুমুল প্রতিবাদ, বিক্ষোভে রাস্তায় নেমে পড়ে। আগে থেকেই পরিস্থিতি বারুদের স্তূপ হয়ে ছিলো। সিআরপির গুলিতে জেলার সবচেয়ে নামী স্কুলের জনপ্রিয় শিক্ষকের গুলিতে মৃত্যু, কয়েকজন ছাত্রের গুলিবিদ্ধ হবার ঘটনা তাতে অগ্নিসংযোগ করেছে মাত্র। কিছু সময়ের মধ্যেই সমগ্র শহর প্রতিবাদে, বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠলো। কোতোয়ালি থানা থেকে পুলিশ উধাও হয়ে গেলো। ছাত্রদের বিক্ষোভে যোগ দিলো সাধারণ জনতা। শান্তিকামী মানুষ, বামপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসীরাও বিক্ষোভে সামিল হলো। তখন অফিসপাড়া সাগরদীঘি আগুনে আগুনে রঙিন। সাগরদীঘির চারপাশে সমস্ত সরকারি অফিসে অফিসে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের প্রেক্ষিতে ক্রুদ্ধ মানুষের হানাদারি। একের পর এক অফিসে আগুন ধরিয়ে দিলো জনতা এবং ছাত্ররা। সরকারি অফিসের কাগজপত্র, আসবাব নিয়ে সে এক লঙ্কাকাণ্ড। রাস্তায় রাস্তায় প্রতিবাদী জনতার ঢল। পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠলে প্রচুর নিরাপত্তা কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে এলেন এসডিও। তাঁর গাড়ি ভেঙে চুরচুর করে দিল জেনকিন্স স্কুলের ছাত্ররা। নিরাপত্তা কর্মীরা সামান্য দূরে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো করুণ চোখে। তারা আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত হলেও অস্ত্রের মুখ নামানো ছিল মাটির দিকে। তারা ক্রুদ্ধ ছাত্রদের দিকে তাকাতেই পারছিল না। এসডিও হেডস্যরের রুমে বসে কথা বলছিলেন। সেখানেও ছাত্ররা হানা দিলে হেডস্যর মৃণালকান্তি বর্মন দরজা বন্ধ করে দেবার নির্দেশ দেন। দু-একজন ছাত্রকে অনুমতি দেওয়া হয় সেখানে ঢোকার। শহর জুড়ে তুমুল সোরগোল। গুলি চালনার ঘটনাটি ঘটেছিল দুপুরে। এরই মধ্যে কয়েক ঘণ্টা কেটে গেছে। চারদিকে তুমুল হইচই। সমগ্র শহরের দখল নিয়েছে স্কুলের ছাত্ররা। অন্যান্য স্কুলের ছাত্ররাও বিক্ষোভে সামিল হয়েছে। সম্ভবত, কংগ্রেসের বিরোধী রাজনীতির লোকজনও প্রতিবাদে ছাত্রদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এবং, শহরের একাংশ লুম্পেনও যে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগে নেমেছে তা পরিষ্কার। এদিকে, খবর এসেছে শহরের কেন্দ্রস্থলে মিলিটারি ব্যারাক (চিলারায় ব্যারাক) আক্রমণ করা হতে পারে। কোত্থেকে খবর এলো, চিলারায় ব্যারাক পাহারা দিচ্ছে অত্যাধুনিক অস্ত্রসজ্জিত সেনা জওয়ানরা। সন্ধ্যার অন্ধকার নামতে শুরু করেছে। স্কুলের মাঠ থেকেই দেখছি পশ্চিমদিকে সাগরদীঘির ওপরে আকাশ আগুনের আভায় লাল হয়ে উঠেছে। অন্ধকার নামতে শুরু করতেই কেমন ভয় করতে শুরু করেছে। ক্লাসের বন্ধুদের যাদের বাড়ি কাছাকাছি তারা সকলেই ততক্ষণে চলে গেছে। কী করবো, বুঝতে পারছি না। চারপাশে সিনিয়র ছাত্রদেরই দেখছি। প্রায় কাউকেই সে অর্থে চিনি না। মাত্র কয়েকজন আমরা হাফপ্যান্ট। তবু, আমাদেরও অনেকেরই রক্ত চলকে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। কেউ কেউ বলছে, ‘চল, আমরাও যাই’। সিনিয়র ছাত্ররা, শিক্ষকরা আমাদের সতর্ক পাহারায় স্কুলে আটকে রেখেছেন। এমন সময় আমার দাদা, তখন ইলেভেনের পড়ুয়া, এসে আমার হাত ধরে বলল, ‘চল, এখনই বেরিয়ে যাই’। আমরা দুজনে স্কুলের দক্ষিণ দিকের গেট দিয়ে বেরিয়ে হাঁটতে থাকি। রাস্তায় তখন হাজার হাজার মানুষের স্রোত। কেউ অফিস থেকে ফিরছে, কেউ উল্টোদিকে যাচ্ছে বিক্ষোভে অংশ নিতে। বিক্ষুব্ধ, প্রতিবাদী বিপুল জনতার ভিড়ের মধ্য দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগোচ্ছি। সুনীতি রোড দিয়ে পুরনো রেল স্টেশনের দিকে হাঁটছি। বাঁদিকে, চিলারায় ব্যারাক। সেখানে তারের বেড়ার ওপাশে সেনা জওয়ানরা। তারা সংখ্যায় প্রচুর। এর আগে, ব্যারাকে এত সেনা জওয়ানকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখিনি। তাদের সকলের হাতে হাতে রাইফেল। না, কেউ ব্যারাক আক্রমণে আসেনি। হাঁটতে হাঁটতে আমরা শেষ অবধি বাড়িতে এসে পৌঁছলাম। বাড়ির সামনেও তখন বেশ বড় একটা ভিড়। মা, দাদা-দিদিরা, বাবা সকলেই উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। আমরা দুভাই এসে দাঁড়াতেই নানা জনে নানা প্রশ্নে জেরবার করে তুললে বাবা বললেন, ‘ওরা মুখ-হাত ধুয়ে একটু খেয়ে নিক, তারপর কথা হবে’।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri