সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
22.অন্তহীন আকাশের নীচে : অন্তিম পর্ব/দেবপ্রিয়া সরকার

22.অন্তহীন আকাশের নীচে : অন্তিম পর্ব/দেবপ্রিয়া সরকার

21.অন্তহীন আকাশের নীচে-২১/দেবপ্রিয়া সরকার

21.অন্তহীন আকাশের নীচে-২১/দেবপ্রিয়া সরকার

20.অন্তহীন আকাশের নীচে/২০

20.অন্তহীন আকাশের নীচে/২০

19.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৯

19.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৯

18.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৮

18.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৮

17.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৭

17.অন্তহীন আকাশের নীচে/১৭

11-March,2023 - Saturday ✍️ By- দেবপ্রিয়া সরকার 577

অন্তহীন আকাশের নীচে/১২

অন্তহীন আকাশের নীচে
পর্ব ১২ 
দেবপ্রিয়া সরকার
------------------------------

আকাশের রঙটা আজ অদ্ভুত রকম ফ্যাকাসে! বাংলা বছরের আজই শেষ দিন। চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান সকাল থেকেই পালন করা হচ্ছে স্বয়ংদ্যুতির মামারবাড়িতে। লখনউতে তারা এতকিছু কখনও হতে দেখেনি। ভাইয়ের হাতে ছাতু দেওয়ার রেওয়াজও এই প্রথম দেখল। দূরে কোথাও সজোরে চড়কের ঢাক বাজছে। বিকেল হতে না হতেই স্বয়ংদ্যুতি বেরিয়ে পড়েছে রাজবাড়ির উদ্দেশে। ইন্দ্রায়ুধ ঠিক সাড়ে চারটেয় আসবে বলে কথা দিয়েছে। দু’খানা এন্ট্রি টিকিট কেটে নীরবে সে চেয়েছিল ছোটবেলায় বহুবার দেখা ভিক্টর জুবিলি প্যালেসের দিকে। ইংল্যান্ডের বাকিংহাম প্যালেসের আদলে তৈরি ধ্রুপদী পাশ্চাত্য শিল্পরীতির অপরূপ নিদর্শন কোচ রাজপরিবারের এই প্রাসাদ। দেশ বিদেশ থেকে অজস্র মানুষ দেখতে আসেন বাড়িটিকে। আরকিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্বাবধানে রাজবাড়ির কিছুটা অংশ জুড়ে তৈরি হয়েছে মিউজিয়াম। বহু অমূল্য ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে সেখানে। উইকিপিডিয়া ঘেঁটে ১৮৮৭ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের রাজত্বকালে তৈরি কোচবিহার রাজপ্রাসাদ সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জোগাড় করেছে স্বয়ংদ্যুতি। সে সব ভাবতে ভাবতেই ঘন ঘন সে ঘড়ি দেখছিল। এভাবে অপেক্ষা করার অভ্যেস তার একদম নেই। যত সময় গড়াচ্ছে তত তার মনে ইন্দ্রায়ুধের প্রতি একটু একটু করে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। মিনিট পনেরো অপেক্ষা করার পর দেখল প্রচণ্ড গতিতে বাইক চালিয়ে আসছে ইন্দ্রায়ুধ।
-আই অ্যাম ইক্সট্রিমলি সরি, তোমায় এতক্ষণ অপেক্ষা করালাম। 
বাইক স্ট্যান্ড করে নামতে নামতে বলে ফেলল ইন্দ্রায়ুধ। স্বয়ংদ্যুতি যথেষ্টই বিরক্ত হয়েছে। ইন্দ্রায়ুধের জায়গায় যদি ভিক্টর বা অন্য কেউ হতো তাহলে নাজানি এতক্ষণে কী তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে বসত সে। কিন্তু ইন্দ্রায়ুধকে কিছুই বলতে পারল না। হাঁ করে চেয়ে থাকল তার দিকে। সি গ্রিন ফুলশার্টে ভারি সুন্দর দেখাচ্ছে ইন্দ্রায়ুধকে। গতকাল ক্যাজুয়াল জিন্স-টিশার্ট আর আজকের ফর্মাল পোশাক দুটোতেই সমান আকর্ষণীয় সে। স্বয়ংদ্যুতির হাতে টিকিট দেখে ইন্দ্রায়ুধ বলল, টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছে? চলো তবে ভেতরে যাওয়া যাক। 
গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই নজরে এল বিরাট সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠ, রঙবেরঙের অজস্র ফুল গাছ আর সবুজের সমারোহ পেরিয়ে লাল ইঁটের তৈরি ঝলমলে রাজপ্রাসাদ। 
-এই যে প্যালেসটা দেখছ এটাই কিন্তু এর আসল রূপ নয়। ১৮৯৭ সালে এক ভয়ঙ্কর ভূমিকম্পে ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তিনতলা রাজবাড়িটি। পরবর্তী কালে বাড়িটির ভেঙে যাওয়া অংশগুলিকে সারিয়ে একে দোতলা প্রাসাদ হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ১.৫০ মিটার উঁচু ভিত্তির ওপর স্থাপিত প্রাসাদটি ৪৭৬৮.৫ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে। উত্তর দক্ষিণে এর বিস্তার ১২০ মিটার এবং পূর্ব পশ্চিমে ৯০ মিটার।  
রাজবাড়িতে ঢোকার মুখে একটা বোর্ডে প্রাসাদ সম্পর্কে যাবতীয় ডিটেইলিং দেওয়া রয়েছে। মোবাইল ক্যামেরায় দ্রুত সেটার ছবি তুলে নিল স্বয়ংদ্যুতি তারপর বিরাট কাঠের ফটক পেরিয়ে প্রবেশ করল দরবার হলে। আজ কোনও ভিডিও শ্যুট করবে না বলে আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল সে। শুধু ঘুরে ঘুরে দেখবে সবকিছু আর ইন্দ্রায়ুধের মুখ থেকে শুনে নেবে কোচরাজাদের ইতিহাস। দরবার কক্ষের রঙিন মার্বেল পাথরের মেঝেতে আঁকা রাজ প্রতীক এবং তার নীচে দেবনাগরী হরফে ‘যতো ধর্ম স্ততো জয়ঃ’ লেখাটি দেখে স্বয়ংদ্যুতির গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। দরবার হল জুড়ে টাঙানো রয়েছে বিভিন্ন রাজাদের ছবি। ছোটবেলায় এগুলো সে অনেকবার দেখেছে। রাজপরিবারের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস সাজানো রয়েছে কয়েকটা ঘর জুড়ে। সেসব দেখতে দেখতে পুরনো দিনে ফিরে যাচ্ছিল স্বয়ংদ্যুতি। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে বারান্দার এক কোণে  দাঁড়িয়ে সে ইন্দ্রায়ুধকে বলল, জানো? ছোটবেলায় রাজবাড়ি বেড়াতে এসে ঠিক এই জায়গাটাতে পড়ে গিয়েছিলাম আমি। মাথাটাথা ফেটে গিয়ে একেকার কাণ্ড! দেখো এখনও দাগ রয়ে গিয়েছে। স্বয়ংদ্যুতির কাছে গিয়ে ইন্দ্রায়ুধ দেখল তার ধনুক আকৃতির ডান ভ্রুর পাশে সত্যিই একটা কাটা দাগ। অনেকটাই কাছে চলে এসেছিল ইন্দ্রায়ুধ। তার ফারফিউমের গন্ধটা নাকে যেতেই স্বয়ংদ্যুতি মুচকি হেসে বলল, বিয়ারডোর গডফাদার ব্র্যান্ডের ফারফিউম, তাই না? আমার ফেভারিট।
আলতো হেসে সম্মতি জানাল ইন্দ্রায়ুধ। বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে ঘুরে প্রাসাদ দেখল তারা। আরকিওলজি ডিপার্টমেন্টের লোকেদের সঙ্গে কথা বলে একদিন পর এখানে ভিডিও শ্যুট করার অনুমতিও পেয়ে গেল। প্রাসাদ চত্বর থেকে বেরিয়ে স্বয়ংদ্যুতি বলল, রাজবাড়ি দেখা তো হল। এখন ভ্লগের জন্যে কিছু তথ্য চাই আমার। কতগুলো  প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তোমাকে। কাছেপীঠে কোনও রেস্তরাঁ থাকলে চলো বসে কথা বলি।  
ইন্দ্রায়ুধের বাইকের পিলিয়নে বসতেই তার পারফিউমের গন্ধটা আরও উগ্র হয়ে ধরা দিতে থাকল স্বয়ংদ্যুতির নাকে। পড়ন্ত বিকেলের ঝিম ধরা আলো, দখিনা হাওয়ার শিরশিরানি এবং ইন্দ্রায়ুধের শরীরের পুরুষালি ঘ্রাণ একটা অচেনা অনুভূতির জন্ম দিচ্ছিল তার মনে।  মাত্র পাঁচ মিনিটের বাইক সফর শেষ করে স্বয়ংদ্যুতির মনে হল যেন অনেকটা পথ সে অতিক্রম করে এল ইন্দ্রায়ুধের সঙ্গে। রেস্তোরাঁর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ইন্দ্রায়ুধ বলল, কী হল স্বয়ংদ্যুতি? ভেতরে এসো।  
হঠাৎই অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল স্বয়ংদ্যুতি। ইন্দ্রায়ুধের ডাকে সম্বিত ফিরল। মুখোমুখি চেয়ারে বসে ইন্দ্রায়ুধ বলল, তোমার নামটা কে রেখেছে বলো তো? গভীর অর্থবহ ঠিকই কিন্তু বড্ড খটোমটো! কোনও সহজ নাম নেই?
-আমার আর দিদির নাম দুটোই বাবার দেওয়া। ছোট নামও আছে আমাদের, টাপুরটুপুর। দিদি টাপুর, আমি টুপুর।
-এক্সিলেন্ট! তোমার যদি আপত্তি না থাকে তবে আমিও তোমায় টুপুর বলেই ডাকব।
-আপত্তি থাকবে কেন? তবে মশাই আপনার নামটিও কম জটিল নয়। ইন্দ্রায়ুধ! দেবরাজ ইন্দ্রের অস্ত্র! চাট্টিখানি কথা! উচ্চারণ করতে দম লাগে বস! আমি কি ওটাকে একটু শর্ট করে নিতে পারি?
-আলবাত পারেন ম্যাম। আমাকে সকলেই ইন্দ্র বলে ডাকে। 
-ওকে ডান! তাহলে ইন্দ্র এবার আমরা শুরু করি? কোচ রাজবংশের প্রতিষ্ঠা এবং বিস্তার নিয়ে আমাকে একটা ব্রিফিং দাও প্রথমে। 
ইন্দ্রায়ুধ গলাটা একটু পরিস্কার করে নিয়ে বলল, কোচ রাজবংশের ইতিহাস জানতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে কয়েকশো বছর। তন্ত্রশাস্ত্রে প্রাচীন কামরূপক্ষেত্রকে চারটি পীঠস্থানে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে কোচবিহার ছিল রত্নপীঠের অন্তর্ভুক্ত। এই তথ্যের ভিত্তিতে মনে করা হয় কোচবিহারের ইতিহাস আর প্রাচীন কামরূপের ইতিহাস একই সূত্রে বাঁধা। 
-বেশ। তারপর? 
-এই তল্লাটে একসময় আধিপত্য ছিল খেন রাজাদের। তুমি কখনও গোসানীমারির রাজপাট দেখেছ?
-না তো। কী আছে ওখানে? 
-খেন রাজাদের রাজত্বের নিদর্শন রয়েছে সেখানে। রাজা নীলধ্বজ ছিলেন খেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। নীলধ্বজের পর তার ছেলে চক্রধ্বজ রাজা হয়েছিলেন। খেন বংশ তথা প্রাচীন কামতারাজ্যের শেষ রাজা ছিলেন নীলাম্বর। রাজা নীলাম্বরের মৃত্যুর পর কিছু কোচ নেতা নিজ নিজ এলাকায় শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। এই নেতাদের একজন ছিলেন হাজো। তাঁর দুই মেয়ের নাম ছিল হীরা এবং জীরা। শোনা যায় দু’জনেই নাকি ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শনা। গোয়ালপাড়া অঞ্চলের চিকনা পাহাড়ের বাসিন্দা এক মেচ যুবক হারিয়া মণ্ডলের সঙ্গে এই দুই বোনই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। 
-একজন ব্যক্তিকেই বিয়ে করলেন দুই বোন? দারুণ ইন্টারেস্টিং তো! ভদ্রলোক নিশ্চয়ই দারুণ হ্যান্ডসাম ছিলেন। সরি একটু মজা করলাম। তবে আগেকার দিনে এসব খুব কমন ঘটনা ছিল। তারপর?
ফিচেল হাসি হেসে বলে উঠল স্বয়ংদ্যুতি। ইন্দ্রায়ুধ বলল, জীরার চন্দন এবং মদন নামে দুই পুত্র সন্তান জন্মায়। অপরদিকে হীরা ছিলেন অত্যন্ত ভক্তিমতী নারী, শিবের উপাসক। 
-রাইট, এটা আমি বাবার মুখে শুনেছি। হীরার ভক্তিতে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান মহাদেব তাঁকে বর দিয়েছিলেন এবং তাঁর গর্ভে এক অসাধারণ প্রতিভাবান পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছিল। তাঁর নাম ছিল বিশু, যিনি বিশ্বসিংহ নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন। তাই তো? 
-একদম ঠিক। তবে শুধু বিশু নয়, হীরার শিশু নামে আরও এক পুত্র সন্তান ছিল। শোনা যায় এই শিশু পরে শিশ্ব সিংহ নামে পরিচয় লাভ করেন। তিনি রায়কত উপাধি নিয়ে বৈকুন্ঠপুর এলাকায় বসবাস শুরু করেছিলেন। এই বৈকুন্ঠপুরকেই আমরা এখন জলপাইগুড়ি হিসেবে চিনি। 
-উফ্! কত কিছু যে জানছি তোমার কাছ থেকে! বিশ্ব সিংহ তো চিকনা পর্বত এলাকায় থাকতেন। তাহলে কোচবিহারে কীভাবে তাঁর রাজবংশ প্রতিষ্ঠা হল?
-হুম, ভাল পয়েন্ট ধরেছ। রাজোপাখ্যানের লেখকের মতে মৃত্যুকালে হীরা বিশ্ব সিংহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন চিকনা পর্বত থেকে তার রাজধানী কোচবিহারে স্থানান্তর করার। মায়ের ইচ্ছানুসারে সেই কাজই করেছিলেন মহারাজ। হীরার বংশধরেরা ‘ভূপ' আখ্যা পেয়েছিলেন এবং রাজ সিংহাসনে যাঁরা বসতেন তাঁদের নামের সঙ্গে ‘নারায়ণ’ সম্বোধন যুক্ত হত।
-আই সি! শুনেছি বিশ্ব সিংহ একজন অত্যন্ত পরাক্রমশালী রাজা ছিলেন। 
-ঠিক। কিন্তু তার রাজত্বকালের শেষ পর্বে তিনি নিজের রাজপাট সুযোগ্য সন্তানদের হাতে তুলে দিয়ে বাণপ্রস্থে চলে গিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। তাঁর আঠারো জন পুত্র সন্তানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন নৃসিংহ, নরনারায়ণ এবং শুক্লধ্বজ। বড় ভাই নৃসিংহ সিংহাসনের মায়া ছেড়ে নরনারায়ণকে রাজা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। শুক্লধ্বজ হয়েছিলেন তাঁর সেনাপতি। নরনারায়ণের রাজত্বকালে কোচরাজ্যের বিস্তার লাভ ঘটেছিল সবচেয়ে বেশি আর এর পেছনে সবথেকে বড় ভূমিকা ছিল শুক্লধ্বজের, যিনি বীর চিলা রায় নামে খ্যাত। চিলের মতো দুরন্ত গতি ছিল তাঁর তাই তাঁকে ওই নামে ডাকা হত। পুরো উত্তরপূর্ব ভারত জুড়ে দাপটের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন চিলা রায় এবং এই অঞ্চলটির প্রায় সকল রাজাকে কর দানে বাধ্য করে ছিলেন।
-বড় বড় চোখ পাকিয়ে ইন্দ্রায়ুধের কথা শুনছিল স্বয়ংদ্যুতি। সে এতটাই বিস্মিত হয়েছিল যে হাতে ধরা কফির কাপে চুমুক দিতে পর্যন্ত ভুলে গেল। 
ইন্দ্রায়ুধ তার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বলল, কী হল টুপুর? অবাক হচ্ছ? বীর চিলা রায়ের কৃতিত্বের কথা শুনে এভাবেই স্পেল বাউন্ড হয় সকলে। তুমি ব্যতিক্রম নও। 
-আমেজিং! এই স্টোরি আমাকে এতকাল কেউ বলেনি কেন? আমি চিলা রায় সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানতে চাই। প্লিজ বলো আমায়।
-আমার থিসিসের বিষয় কোচ রাজবংশ এবং সেটার একটা বড় অংশ জুড়ে আছে বীর চিলা রায়ের কথা। নিশ্চয়ই আমি বলব তোমাকে ওঁর সম্পর্কে। উত্তর-পূর্ব ভারতে গেরিলা যুদ্ধ কৌশল যাঁর হাত ধরে প্রথম শুরু হয়েছিল সেই বীর যোদ্ধার কাহিনি যদি তোমার ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে সারা বাংলা এবং দেশের মানুষের কাছে পৌঁছোয় তবে তার থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না। তোমার মেইল আই ডি টা আমায় হোয়াটস্ অ্যাপ করো, আমার কাছে চিলা রায় সম্পর্কে যা যা তথ্য আছে সব তোমায় মেইল করে দেব, কেমন? 
ইন্দ্রায়ুধের দিকে কেমন একটা ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল স্বয়ংদ্যুতি। তার এই অদ্ভুত চাহনি দেখে ইন্দ্রায়ুধ বলল, কী হল তোমার? আর ইউ ওকে? 
স্বয়ংদ্যুতি গম্ভীর মুখে বলল, কিছু হয়নি ইন্দ্র। আসলে চিলা রায়ের কথা শুনে যতটা না অবাক হচ্ছি তার থেকে অনেক বেশি সারপ্রাইজড হচ্ছি তোমায় দেখে। নিজের নেটিভ প্লেস আর তার ইতিহাস নিয়ে কী ভীষণ প্যাশনেট তুমি! যখন আমায় সেই সব ইতিহাসের কাহিনি শোনাচ্ছিলে তোমার চোখমুখের ভাব লক্ষ্য করছিলাম। হ্যাটস্ অফ্ টু ইউ ইন্দ্র! আই উইশ তোমার মতো প্যাশন যদি সকলের থাকত তাহলে এই শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস এভাবে লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে যেত না। 
এবার সত্যি লজ্জা পেল ইন্দ্রায়ুধ। তার ফর্সা গালে ফুটে উঠল রক্তিম আভা। স্বয়ংদ্যুতির মতো স্মার্ট, সুন্দরী তরুনী এভাবে তাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করছে দেখে ভীষণ ভাল লাগছে তার। সে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল এমন সময় শব্দ করে বেজে উঠল মোবাইল ফোনটা। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখল সৌরিশ কলিং। রিসিভ করতেই ওপার থেকে ভেসে এল কিছু কথা। ইন্দ্রায়ুধ গম্ভীর স্বরে বলল, কখন হল এসব? ডক্টর কী বললেন? ঠিক আছে, আমি আসছি।
ফোন রেখে স্বয়ংদ্যুতির দিকে তাকিয়ে ইন্দ্রায়ুধ বলল, আই অ্যাম সরি টুপুর, আমাকে এখুনি একবার যেতে হবে। পাখি হঠাৎ কোচিংয়ে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। 
-পাখি মানে বকুলমাসির মেয়ে? সে কী! কী হয়েছে ওর? আমিও যাব তোমার সঙ্গে। 
সন্ধ্যা গাঢ় হয়ে এসেছে রাজনগরে। অন্তহীন আকাশের গায়ে অজস্র তারা ঝলমল করছে। আলো-আঁধারি পথ ধরে স্বয়ংদ্যুতিকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত বাইক ছোটাল ইন্দ্রায়ুধ।   

তথ্যসূত্রঃ i) ‘কোচবিহারের ইতিহাস’- ভগবতীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
ii) ‘কোচবিহারের ইতিবৃত্য’- রণজিৎ দেব
  iii) www.wikipedia.org, www.tourism-of-india.com Cooch Behar Palace 
               
 

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri