শূন্য আমি পূর্ণ আমি/১১
শূন্য আমি পূর্ণ আমি
পর্ব/১১
অমর চক্রবর্তী
^^^^^^^^^^^^^^
কোচবিহারে তখন স্বনামধন্য তিন কবি।অরুণেশ ঘোষ, রণজিৎ দেব, সমীর চট্টোপাধ্যায়। গভীর বন্ধুত্ব। কলকাতার সঙ্গে খুব যোগাযোগ। সমীরদার মুখে শুনেছি কত কষ্ট করে ওঁরা কলকাতায় যেতেন। ফারাক্কা ব্রিজ হয়নি তখনো। আবার কলকাতায় না গেলে কলকাতা স্বীকৃতি না দিলে কবি হিসেবে জায়গা পাওয়া যাবে না। ষাটের দশক তিন কবি তিন রকমের লেখা। এদের নিয়ে অনেক কথা বলতে হবে। কিন্তু আমার তো আগে চাকরি চাই। বি.এড-এ ভর্তি হয়ে গেলাম এবং ন্যাশনাল এমপ্লয়মেন্ট থেকে পি.এস.সি-র জন্য ইন্টারভিউ-এর ডাক পেলাম। কলকাতার কিছু চিনি না। তখন ঐ এক কামরূপ এক্সপ্রেস। বসার টিকিট পেলাম। চালাও পানসি বেলঘরিয়া। কোথায় থাকব জানি না। নিউ কোচবিহার থেকে গাড়ি ছাড়ার পর কান্না পেয়ে গেল! কেউ নেই আমার যে গাড়িতে তুলে দেবে। ছোটোখাটো মানুষ তবে সেসময় ভরপুর সাহস ছিল।গাড়িটা ছাড়তেই একজন কালো ধুমসো বড়সড় মানুষ এসে আমায় বলল, ভাইয়া আপকা সিট কা আন্ডার মে মের লাগেজ রাখু? টিটিকা সাথ বাত করকে লে জাউঙ্গা। বলার অপেক্ষা না করেই সিটের তলে ঢুকিয়ে দিল।
একটু একটু করে সবার সঙ্গে পরিচয় হচ্ছে। সমীর চট্টোপাধ্যায় প্রতিবেশী। রণজিৎ দেব খুব দূরে নন। অরুণেশদা একটু দূরে - হাওয়ার গাড়ি। তবে অরুণেশদার সব খবর পেতাম ফ্রেন্ডস টেইলার্স-এ বসে শিবুদা বা জীবতোষ দাশের কাছে। শিবুদার কাছে শুনতাম শৈলেশ্বর ঘোষ প্রদীপ চৌধুরী প্রমুখ হাংরি জেনারেশনের কবিদের কথা।
পরিচিত হলাম 'দেখেছি নিষাদ এক'-এর কবি পরেশ সোম, শ্যামলী ভট্টাচার্য, বিপ্লব রুদ্র (কাব্যগ্রন্থ : হিজল বনে বসন্তকাল) প্রাণগোবিন্দ মিত্র। রণজিৎদা সমীরদার সঙ্গে এখানে ওখানে যাচ্ছি। গেলাম উত্তরবঙ্গের পল্লীগীতি (ভাওয়াইয়া, চটকা)-র লেখক সংগ্রাহক হরিশ চন্দ্রের পাল-এর বাসায়। আগে পুরনো বাজার যেতে পাল বাড়ির কাচের শো রুমে হিজ মাস্টার ভয়েস ছবি দাঁড়িয়ে দেখতাম। সেই ওনার বাড়িতেই যাব ভাবতেই পারিনি। ভাওয়াইয়া শিল্পীদের রেকর্ড বের করা থেকে উত্তরবা়ংলার মেয়েদের লৌকিক ব্রতকথা - কত বড় কাজ ওনার অথচ কি অমায়িক মিশুকে!
আমার তখন খুব কাশি হত। সবার হরিশদা মানে লোকসংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ প্রচারক হরিশ্চন্দ্র পালকে আমার হরিশদা বলতে সংকোচ হত। মনে হচ্ছে জেঠু বলতাম। পরে ওনার ছেলে চন্দন পালকে চন্দনদা। অনেকেই অমিয়ভূষণ মজুমদারকে অমিয়দা বলত। আমার ভাগ্য অমিয়ভূষণ মজুমদারের মেয়ে এথেনা আমার বি.এড. মেট, প্রকৃত বন্ধু। প্রকৃত বন্ধু এই কারণে, এথেনা-ই আমার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এটা একটা কবি হিসেবে স্বীকৃতি।ওর সঙ্গেই রাজনগরে যাওয়া, মাসীমা মেসোমশাই ডাক দেবার অধিকার। বটবৃক্ষ স্বরূপ এই দুই ব্যক্তিত্বকে কাছে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করেছি। হরিশ জেঠু তখন মিক্সার সিগারেট খেতেন। মজা করে বললেন - নে খেয়ে দেখ, কাশি কমে যাবে।ড.আশুতোষ ভট্টাচার্য এসেছিলেন ওনার কাছে।
ট্রেন থেমে গেল ব্যান্ডেল স্টেশনে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল কামরূপ এক্সপ্রেস। সবাই প্লাটফর্মে। আমিও নামলাম। প্ল্যাটফর্মে পুলিশ গিজগিজ করছে। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম - কি ব্যাপার? বলল - পুলিশের কাছে খবর আসাম থেকে গাঁজা চরস যাচ্ছে এই ট্রেনে। তখনি আমার মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল, আরে ঐ লোকটা তো আর আসেনি!তবে কি! আমার কামরা থেকে পুলিশ নেমে গেলে আমি উঠলাম। ভাগ্যিস আমার সিটের কাছে যায়নি! গাড়ি যখন হাওড়ায় ঢুকল।কোথা সেই মূর্তিমানের উদয় এবং নিচ থেকে ব্যাগ নিয়ে অন্তর্ধান। যাক, আমার গন্তব্য আলিপুর ভবানী ভবন। পৌঁছে দেখি আরো চোদ্দ জন উপস্থিত। কলকাতা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সব। আমি একা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং পনেরো নম্বরে। ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে দেখলাম এক্সপার্ট ড.আশুতোষ ভট্টাচার্য।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴