সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
09-December,2022 - Friday ✍️ By- শিশির রায় নাথ 318

বাগানিয়া জার্নাল-১১

বাগানিয়া জার্নাল
পর্ব।।এগারো।।
শিশির রায়নাথ
~~~~~~~~~~~~~~~

টি-টেস্টিং-এ প্রথমেই ‘চেহারা’((Appearance) অর্থাৎ শুকনো চা-পাতার রঙ (colour), আকার (size), আকৃতি (shape) , ডাঁটি (Stalk), আঁশ (Fibre), সুবাস (aroma) ইত্যাদি দেখার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়াও, চা তৈরি হবার সময় চায়ের গায়ে একটা বার্নিশের মত আস্তরণ পড়ে যাকে বলে ‘ব্লুম’ (Bloom) । কিন্তু খারাপ ঝাড়াই-বাছাই, হাতাহাতিতে ব্লুম দ্রত নষ্ট হয়ে যায়। তাই ঝাড়াই-বাছাই-এর ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকতে হয়।এবং টি-টেস্টাররাও শুকনো পাতার ‘ব্লুম’ পরীক্ষা করেন।চা যত ‘ব্লুমি’ হবে তত ভালো হবে পানীয়-চা (Liquid Tea)।
এর পরে যে কাজটা করা হয় তা আমাদের রোজকারের চা-তৈরির মতনই – তবে এর একটা নির্দিষ্ট নিয়ম (set norm/standard procedure) আছে। তিন থেকে পাঁচ গ্রাম শুকনো চা-পাতা সাদা চিনামাটির লম্বাটে পাত্রে নিয়ে তাতে ফুটন্ত গরমজল ( ডিস্টিল্‌ড ওয়াটার হলে সবচেয়ে ভাল) ঢেলে মুখটা ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।তারপর ঘড়ি ধরে তিন থেকে পাঁচ মিনিট পাতাকে সেখানে ভিজতে দেওয়া হয়।একে বলে পাতা-ভেজানো ((brewing/infusion/steeping)। এর জন্য আগে ব্যবহার করা হত বালিঘড়ি (sand dial) । এখনও অনেক ফ্যাকটরীতেই এই বালিঘড়ি দেখা যায়। [ছবি-১]
নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ভেজার পর কাপের সেই জলটা পাতার রস টেনে নিয়ে যে তরল পানীয়টা তৈরি করে তাকে বলে ‘Infusion’ – চলতি কথায় লিকার (liquor)।আর ভেজানো-পাতাগুলোকে বলে infused leaf। এবার লিকারটাকে আস্তে আস্তে আরেকটা চিনামাটির সাদা বাটিতে ঢেলে (decanting) ভেজানো-পাতা থেকে আলাদা করে নেওয়া হয়। প্রথম পাত্রের ঢাকনাটা উলটো করে তার মধ্যে ভেজানো-পাতাগুলোকে রেখে পাত্রের ওপর ঢাকনাটাকে ওই উলটো করেই বসিয়ে দেওয়া হয়। আঙুলের চাপে ভেজানো পাতাগুলোর জল যতটা পারা যায় বার করে দিয়ে তার রঙ ও ঔজ্জ্বল্য দেখা হয়। পাতাগুলো যত উজ্জ্বল বাদামী হবে তত ভালো চা - সেই চা-কে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যাবে। আর যত ম্যাড়মেড়ে ও কালো হবে তত খারাপ চা।[ছবি- ২,৩]
এবার শুরু হয় মূল পরীক্ষা-নিরীক্ষা। প্রথমে দেখা হয় লিকারের রঙ (colour) ও স্বচ্ছতা (transparency) ।
স্বচ্ছ, উজ্জ্বল, সোনালি-বাদামী (Golden-brown) বা তামা-বাদামী (copper-brown) লিকার মানে ভালো চা। অস্বচ্ছ ও কালো লিকার ভাল চা নয়।
কাপের লিকারটাকে একটু ঠান্ডা হতে দিয়ে একটা বড় চামচে তুলে সশব্দে-চুমুক (slurp) দিয়ে মুখে নেওয়া হয়।[ছবি-৪,৫] তার আগে টেস্টারকে জল দিয়ে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার করে রাখতে হয় যাতে আগে খাওয়া কোন খাবারের স্বাদ বা গন্ধ মুখে না লেগে থাকে। কুলকুচি করার মতো করে লিকারকে এবার জিভের ডগা, দুপাশ, পিছন, ডান গাল, বাম গাল এবং তালুতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখা হয় এর স্বাদ কেমন, গন্ধ (falvour) কেমন, কষা বা কটুত্ব (Astringency or pungency) কেমন। একাজ করার জন্য একাগ্রতা ও হাতে-কলমে দীর্ঘ অনুশীলনের প্রয়োজন। বই পড়ে হয় না।
অর্থোডক্স এবং সিটিসি – দুক্ষেত্রেই টেস্টিং একই রকমের।অনেক সময়, বিশেষত সিটিসি চায়ের ক্ষেত্রে, এরসঙ্গে এক চামচ দুধ মিশিয়ে ‘টেস্ট’ করা হয়। কিছুক্ষণ ঠান্ডা হবার পর কাপের গা ঘেষে লিকার বা চায়ের একটা বাদামী বলয় (ring) দেখা যায়। একে বলে ক্রীম (crème)। ক্রীম যত উজ্জ্বল ও ঘন হবে তত ভালো চা। আর যত ফ্যাকাশে (dull) ও কাদার মত (muddy) হবে চা তত খারাপ।
তৈরি-চায়ের গুণমান বোঝানোর জন্য টেস্টারদের অনেক পরিভাষা (terminology) আছে।তবে হাতেকলমে পাশাপাশি রেখে তুলনা করে না দেখলে তার সবকটার ‘অর্থ’ সাধারণের পক্ষে হৃদয়াঙ্গম করা সম্ভব নয়।কয়েকটা বিশেষ পরিভাষা এখানে দেওয়া হল যা মনে রাখতে পারলে দোকান থেকে ভালো চা বেছে নেওয়ায় কাজ দিতে পারে।
Autumnal: বসন্ত কালের (Autumn Flush) চা; একটু লালচে রঙের, কিন্তু নানা রকম ফ্লেভার ও গন্ধ থাকে। অনেকেরই পছন্দের চা।
Muscatel: সেকেন্ড ফ্লাশের চা। কস্তুরীময় বনজ গন্ধ। দামী চা।
Bakey: পোড়া পোড়া গন্ধ। চায়ের ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত।
Bright: এই চায়ের লিকার এবং ভেজানো-পাতা দুটোই উজ্জ্বল।অর্থাৎ এতে কোন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ নেই। ভালো চা-য়ের অত্যন্ত বাঞ্ছিত গুণ।
Burnt: পোড়া চা। তৈরির সময় অতিরিক্ত তাপে পুড়ে গ্যাছে। এ চা চলবে না।
Brisk: সাদামাটা নরম চায়ের বিপরীতে এক চনমনে বৈশিষ্ট – ‘ফ্রেশনেশ’ বা ‘তাজগি’ বলা যায়।
Clean: চায়ে কোন ডাঁটি, আঁশ নেই।ভাল ঝাড়াই-বাছাই।
Cream: আগেই বলা হয়েছে।যত ক্রীম তত ভালো।
Dull: এই শব্দটা শুকনো-পাতা, ভেজানো পাতা এবং লিকার – সবক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়।লিকার বা দুধ মেশানো চা ‘ডাল’ মানে নিম্নমানের চা - (খারাপ পাতা দিয়ে/খারাপ ভাবে বানানো)। এদের এই ‘ডাল’-ত্ব আসে বেশী ফার্মেন্টাশান বা ব্যাক্টেরিয়ার কারণে।আর শুকনো পাতার ‘ডাল’ত্ব আসে খারাপ ভাবে ঝাড়াই-বাছাই থেকে।
Flakey: অর্থোডক্স চা - ঠিক মত ‘টুইস্টেড’ নয়। হয় ঠিকমতো উইদারিং হয় নি, নয়তো রোলিং ভাল হয় নি।
Flavour: চায়ের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট। পানীয় চায়ে সবসময়ে একটু মিষ্টি সুবাস থাকবে।
Fruity: চা খেয়ে মুখটা টক টক লাগে বা বিস্বাদে ভরে যায়। এটা হয় খুব বেশী ফার্মেন্টেড হয়ে যাওয়া – এবং পরবর্তীতে ব্যাক্টেরিয়া আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার কারণে।নষ্ট চা।
Green: ভেজানো-পাতার রঙ সবুজ। মোটা পাতা প্লাকিং, অ-পর্যাপ্ত উইদারিং, অ-পর্যাপ্ত রোলিং এবং অ-পর্যাপ্ত ফার্মেন্টেশান এর কারণ।খুবই অবাঞ্ছিত।
Leafy: বড় বড় পাতা দিয়ে বানানো চা।
Pungent: লিকারের কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য। চরম ‘তাজগি’ এবং তালুতে প্রচন্ড কষাটে ভাব।কড়া চা।
Smokey: লিকারের ধোঁয়ার গন্ধ। বাঞ্ছিত নয়।
Tippy: টিপস্‌ বেশী। কাঙ্খিত।
এখানে একটা মজার কথা বলে নেওয়া যাক। মানুষ সবসময়েই পরিবর্তন চায়। চায় একঘেয়ে স্বাদের বদল। তাই আগে যে স্মোকি বা হাই রোস্টেড চা-কে অবাঞ্ছিত বলে মনে করা হত- এখন সেই সব চা-ই নানা বিপননের মোড়কে বাজারে এসেছে। বিক্রীও হচ্ছে। এমনই হল ‘পার্পেল টি’(Purple Tea)। এক জাতের চা-গাছের কচি পাতারা হালকা সবুজ বা হলদেটে সবুজের পরিবর্তে বেগুনি (purple)রঙের হয়। [ছবিঃ ৬,৭] তাদের জংলী জাত বলা হত। খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হত না। এখন সেই পাতার চা ‘পার্পেল টি’ হয়ে এসেছে - মূলত কেনিয়া থেকে।এর ফ্লেভার অনেকটা ওলং চায়ের মত।ব্লু বেরী, সাদাবেগুন (egg plant), কালো আঙুরের মতো এতেও উচ্চমাত্রায় anthocyanins আছে যা নাকি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri