সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
26-May,2023 - Friday ✍️ By- সুবীর সরকার 558

গঞ্জহাটের আখ্যান-১১/সুবীর সরকার

গঞ্জহাটের আখ্যান-১১
সুবীর সরকার
----------------------------

৩৭.
ইয়াকুব ব্যাপারী আর মহিউদ্দিন ওস্তাদের দেখা হয়।হয়তো দৃষ্টি বিনিময় হয় তাদের। কিন্তু কোনও কথা হয় না। হাট তখন কেন্দ্রচ্যুত হয়ে টুকরো টুকরো ভাবে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। হাটের মধ্যে জেগে ওঠে কত কত রকমের হাট। ইয়াকুব চলে যায় তামাকহাটির দিকে।আর মহিউদ্দিন ধানহাটির গহিনে মিলিয়ে যেতে থাকেন। আমরা ঠিক তখন দেখে ফেলি আসারিকান্দির লোকমান পাগেলা কে। সে তখন মাথায় গামছার পাগড়ি বেন্ধে চুপচাপ বসে আসে গিয়াস হেকিমের হেকিমি ওষুধ বিক্রির জমায়েতে।আসলে ওষুধ নয়। তার আগ্রহ গিয়াস হেকিমের ওষুধ বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে দুলে দুলে গান করবার প্রতি।
আশেপাশের বিশ তিরিশ হাটে আজ প্রায় তিন কুড়ি বছর ধরে এভাবেই গান আর হেকিমী ওষুধ নিয়েই ছুটে চলেছেন গিয়াস হেকিম। এর আগে তার বাপের সাথে,তার বাপ আবার তার বাপের সাথে ঘুরে ঘুরে বেড়াতেন হাটে হাটে।গিয়াস হেকিম আর তার গান আর তার শিকড় বাকর ছাল বাকলার ওষধি সামগ্রী নিয়ে এক রঙ্গিলা জীবনের ভেতর কাটিয়ে যাচ্ছেন তার আয়ুষ্কাল। আমরা দেখতে পাই গিয়াস হেকিম
তার বাবরি ছাটা চুল দোলাতে দোলাতে গাইছেন -
"ছাড়িবার না পাং 
এই গানের মায়া"

৩৮.
গানের পর গান চলতে থাকে। গান থামে।কিছু কথা তথা হয়।ওষুধের গুণকীর্তন হয়। মজা গুয়া পান বিড়ি  তামাকু সেবন হয়। হাসি মস্করা হয়। লোকমান পাগেলা শরীরের আড়মোড়া ভেঙে তার পেশিসমগ্রে একটা মত্ততা বইয়ে দিতে দিতে একটা নাচের তীব্রতা ক্রমে নির্মিত করতে থাকেন। গিয়াস হেকিম তখন দোতরা বাজিয়ে গাইছেন -
"গান গান করিয়া সর্বনাশ
তবু না মেটে গানের হাউস "
এইভাবে হাটের মধ্যে জেগে ওঠে নতুন এক হাট।
আর একসময় প্রসঙ্গ হারিয়ে কিরকম প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে থাকে লোকমান। লোকমান পাগেলা। চরে চরে বালাবাড়ির কাশিয়ার ঝোপে ঝোপে হাটগঞ্জের মস্ত পরিধির ভেতর ডুবে যেতে যেতে কত কত পুরাতন আর নতুন গল্প সে তুলে আনে।সাজিয়ে দেয়।ছড়িয়ে দেয়। হাটে হাটে লোকমান হাটুয়া পাইকার ব্যাপারীদের শোনায় সেই সব গল্প।মানুষ ভালোবেসে তাকে পাগেলা বলে ডাকে। লোকমানের বাবা নইমুদ্দিন ছিল পান গুয়ার দোকানি। গোলকগঞ্জের আর আসারিকান্দির হাটে সপ্তাহে তিন দিন তার দোকানদারি।বাকি চারদিন সে বিবাগী। কখনো গৌরীপুরের বড় রাজকুমারীর বেটা মৃণাল বড়ুয়ার সাথে গানবাড়িতে, কখনো লালজি রাজার হাতি ধরার ফান্দিদের দলে মিশে যাওয়া,কখনো আসগর বয়াতির পালাটিয়ার দলে ঢোল বাজানোর কাজে ডুব দেওয়া। এইভাবেই একটা জীবন কখন কিভাবে বুঝি ফুরিয়ে গেল। নইমুদ্দিনের ইন্তেকালের পর প্রায় হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল তার জানাজায়।এসেছিলেন লালজি রাজা।রঘুনাথ মাহুত। বয়ান শেখ।

৩৯.
আজও, মরণের প্রায় চল্লিশ বছর পরেও মানুষের স্মৃতিতে খুব খুব বেঁচে আছেন নইমুদিন। লোকমানের রক্তেও বাপের রক্তের ধারা। পীরনানার জীন।
ঘুরে ঘুরে জীবন দেখার জীবন লোকমানের।গানের জীবন।নাচের জীবন। বাদ্য বাজনার জীবন।চিরকালের সব মানুষের গল্পের জীবন।আসলে মানুষ তো গল্প জড়িয়েই বেঁচে থাকতে চায়।
হাটের জমে ওঠা কিংবা ভাঙা হাটের স্তব্ধতার ভিতর লোকমান গতিয়েই দেয় না ফুরোন গল্পের ভাড়ার।
টোকন ব্যাপারী আর তার মত্ত হাতি জংবহাদুরের গল্পকে ভরা হাটে ডুবিয়ে দিয়ে লোকমান একমনে গুনগুন করে -
"ওরে কামাই কাজে যেমন তেমন
মানুষ মারার যম"
হাট এভাবেই লোকমান পাগেলার হাটে রূপান্তরিত হয়ে যেতে থাকে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri