বাগিচার প্রান্তিক জনপদগুলির সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা/গৌতম চক্রবর্তী
বাগিচার প্রান্তিক জনপদগুলির সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চা
গৌতম চক্রবর্তী
উত্তরাংশ মানে আজকের পশ্চিমবঙ্গের সমগ্র উত্তরবঙ্গ নয়, উত্তরবঙ্গের উত্তরতম অংশের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলাতে ভারতীয় শিল্পোদ্যোগের ইতিহাসে চা-বাগান স্থাপন বা চা-শিল্পের বাণিজ্য একটি নতুন পালক হিসেবে সংযোজিত হয়েছিল উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে। আর এই উদ্যোগের উদ্যোগপতি ইউরোপীয়রা হলেও অখণ্ড বঙ্গে এই উদ্যোগের পথিকৃৎ হিসেবে বঙ্গদেশের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। চা-বাগানের একটা সামাজিক স্তরবিন্যাস আছে। সবচেয়ে ওপরের ধাপে আছে বাগানের মালিক, তার নীচে সাহেব অর্থাৎ বিভিন্ন স্তরের ম্যানেজারবৃন্দ। তার তলায় বাবু (কেরানিকুল), তারপর সর্দার (তদারককারী), এবং সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করছে শ্রমিক। বাবুদের কোয়ার্টারগুলো থাকত কেন্দ্রীয় অঞ্চলে। তবে সাহেবের কোঠি থেকে বেশ দূরত্ব রেখেই। ইউরোপীয় তথা শাসক গোষ্ঠীর লোক হিসেবে চা-শিল্প স্থাপনে অতিরিক্ত সুবিধা পেতেন সাহেব উদ্যোগপতিরা। অন্যদিকে বঙ্গজ উদ্যোগপতিদের নানানতর প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হয়ে চা-বাগান স্থাপন করতে হত। রাষ্ট্রীয় বা সরকারী কোনো সাহায্যই তারা পেতেন না। চা-শিল্প একটি সম্পূর্ণ নতুন ধরনের শিল্প। এই শিল্প সম্পর্কে তাদের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। দেশজ চা-উদ্যোগপতিরা সকলেই ছিলেন এই ভূমিতে অভিবাসী। তাই বাঙালি চা উদ্যোগপতিরা চা-বাগান স্থাপনের আদিপর্বে সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে ভাবেননি বা ভাবার অবসরও ছিল না। আদিপর্বে তাদের লক্ষ্য ছিল সাফল্য অর্জন করা। অন্য কিছু ভাবনাই তাদের চিন্তনে ছিল না। বঙ্গজ চা-উদ্যোগপতিরা কেউ-ই পূর্ববঙ্গে বা দক্ষিণবঙ্গের সম্ভ্রান্তশালী ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান ছিলেন না। এরা অধিকাংশই ছিলেন ব্যবহারজীবী। এই সমস্ত কারণে চা-শিল্প ছিল তাদের কাছে এক চ্যালেঞ্জ। তাই প্রথম প্রজন্মের উদ্যোগপতিরা সাহিত্য-সংস্কৃতি শিক্ষায়তন স্থাপন, ক্রীড়া চর্চায় উৎসাহ দেখাননি।
চা-বাগানের ত্রিভাষিক জনগোষ্ঠী ও নৃগোষ্ঠীর কথা না জানলে সাহিত্য-সংস্কৃতির চিত্র স্পষ্ট হবে না। আসলে জন বিন্যাস ও ভাষা বিন্যাসকে সামনে রেখেই সাহিত্য-সংস্কৃতির আলোচনা উঠে আসে। ইউরোপীয়দের সাহিত্য জগৎটি কেমন ছিল তা জানা যায় না। কারণ কোনও সাহেব উদ্যোগপতি ও সাহেব ম্যানেজার স্মৃতিকথা, আত্মকথা, চরিতকথা কিছুই লেখেননি। সাহেবরা যেক্ষেত্রে কর্ম করেছেন সে ক্ষেত্র সম্পর্কে কিছু না কিছু লিখেছেন। ব্যতিক্রম চা-বাগানের ম্যানেজারেরা। কোনও ইউরোপীয় উদ্যোগপতি ও ম্যানেজারের স্মৃতিকথা বা আত্মচরিত পাওয়া যায় নি। দেশজ বঙ্গজ উদ্যোগপতিরাও স্মৃতিকথা বা সে সময়ের চা-বাগান স্থাপনের কথা লেখেননি। তৃতীয় প্রজন্মের বঙ্গজ উদ্যোগপতি বীরেন্দ্রচন্দ্র ঘোষ যা লিখেছেন সেটিকে চা-বাগান বিষয়ক স্মৃতিচারণা বলা যায় না। বাঙালি ম্যানেজাররাও লেখেননি। ফলে সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষণার ক্ষেত্রটি সঙ্কুচিত। (তথ্যসূত্র- আনন্দগোপাল ঘোষ) সংস্কৃতির ক্ষেত্রটি অবশ্যই নয়। এই সংস্কৃতি ইউরোপীয়দের ছিল। বাঙালিদের ছিল, আবার আদিবাসী চা-শ্রমিকদেরও ছিল। ক্লাব সংস্কৃতি সর্বার্থেই ইউরোপীয় সংস্কৃতির বাহক। বাগানগুলিতে ইউরোপীয়দের সংখ্যা নগণ্য ছিল। তাই তারা সকলে মিলে বিভিন্ন অংশে ক্লাব সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছিলেন। ইউরোপীয় তথা ইংরেজরা সাধারণভাবে কনসার্ট, অপেরা ও থিয়েটার-এ অভ্যস্ত ছিলেন। আশপাশের বেশ কয়েকটি চা-বাগান নিয়ে সাহেবদের জন্য ছিল একটি ক্লাব। নাম ‘ইউরোপীয়ান ক্লাব।’ এটাই ছিল তাঁদের সপরিবার সামাজিক মেলামেশার জায়গা। ব্রিটিশ কোম্পানিগুলির সাহেবরা চলে গেলেও এ ক্লাবের নাম বদলায়নি, যেমন বদলায়নি দেশি ম্যানেজার এবং অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজারদের ‘সাহেব’ খেতাব। নিম্নবর্গের কর্মচারিরা ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার সম্পর্কিত কারণে তাঁদের ‘সাহেব’ সম্বোধন করতেন।
চা-বাগানের সাহেবরা সপ্তাহে একদিন ক্লাবে মিলিত হতেন। বাবুদের সেখানে যোগ দেবার প্রশ্ন ছিল না। ক্লাবের ভেতরে বিনোদনের উল্লেখযোগ্য উপকরণ হিসেবে ছিল প্রজেক্টারে ইংরেজি সিনেমা দেখানো, বিলিয়ার্ড, তাস ইত্যাদি খেলার আয়োজন। আর ক্লাবের বাইরে ছিল ব্যাডমিন্টন ও লন-টেনিস খেলার কোর্ট। সর্বোপরি ক্লাবের অভ্যন্তরে মদ্যপানের ব্যবস্থা। তবে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরিও ছিল। চা বাগানের কোয়ার্টারে গা ভাসিয়ে শৈশবের দিনগুলি থেকে জীবনের আঠেরো-উনিশ বছর বয়স পর্যন্ত জলপাইগুড়ি শহরের বা ডুয়ার্সের অনেক শিক্ষক ও সরকারি কর্মচারি বা ব্যাবস্যীদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে যারা নিশ্চিন্ত এবং স্বপ্নময় দিন কাটিয়েছেন চা বাগিচার নিভৃতে। কালচিনি ছিল জলপাইগুড়ি জেলায়। কালচিনিতে স্থানীয় ইউরোপীয়ান ক্লাবে লাইব্রেরি ছিল। ইউরোপীয়ান ক্লাবটির অবস্থান ছিল ডিমা বাগান থেকে কিলোমিটার কয়েক দূরে কালচিনি বাগানের কাছাকাছি বিশাল এক মাঠের পাশে, বেশ নির্জনে। চা-বাগানের উত্তরসীমা বেয়ে কালচে পিচের রাস্তা আলিপুরদুয়ার থেকে হাসিমারার দিকে চলে গিয়েছে। রাস্তার গা ঘেঁষে পড়ে থাকে অলস রেল লাইন। আগে ছিল মিটার গেজ এখন ইলেক্ট্রিফিকেশন হয়ে ব্রডগেজ। আগে সারাদিনে অসম থেকে আসত এবং যেত দু’ একটা মেল ট্রেন আর দীর্ঘাতিদীর্ঘ মালগাড়ি। মালগাড়ির মেটে কামরাগুলি দুলতে দুলতে চলে যেত। ছেলেছোকরারা খেলার ছলে গুনতো এক… দুই… তিন… চার…। রেললাইনের ওপারেও চা-গাছের সবুজ বিস্তার দিগন্ত ছুঁয়েছে। আকাশের নীল ও মাটির সবুজ একাকার সেখানে। কিন্তু ওপারটা বড্ড নির্জন। ওপারের শেড-ট্রি গুলিও যেন বড্ড বেশি দীর্ঘ আর ঝাঁকড়া ডালপালাওলা, কালো।
চা-বাগানের সাহিত্য-সংস্কৃতি-বাণিজ্যের ইতিহাস লিখতে গিয়ে একটা কথা বার বার মনে হয়। সেটি হলো চা-বাগান বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অভিবাসী, অনাবাসীদের বিষয়। এত বড় একটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ক্ষেত্র পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন অভিবাসী বা অনাবাসী। উদ্যোগপতি, ম্যানেজার, শ্রমিক সকলেই অভিবাসী অথবা অনাবাসী। এরূপ দ্বিতীয় কোনো শিল্প ভারতীয় উপমহাদেশে সে সময় ছিল না। বাঙালি বাবুরা সংখ্যায় একটু বেশি ছিলেন। তাদের সাংস্কৃতিক জীবনের অঙ্গ ছিল দুর্গোৎসব, দীপাবলী উৎসব, ফুটবল খেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাইরে থেকে শিল্পী, সাহিত্যিকদের আমন্ত্রণ করে নিয়ে আসা। দুর্গোৎসব, দীপাবলী উৎসবকে কেন্দ্র করে জলসা বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো, জলপাইগুড়ির অভিবাসী বঙ্গজ সমাজ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠা দিবস বা মনীষীদের জন্মোৎসব বা স্বাধীনতা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। এই সব অনুষ্ঠানে কলকাতার খ্যাতিমান লেখক, গায়ক, ফুটবলার, নাট্যব্যক্তিত্ব, আবৃত্তিকার আসতেন। চা-শিল্প থেকে বিপুল উদ্বৃত্ত অর্থ তাদের হাতে এসে যাবার ফলে দ্বিতীয় প্রজন্মের চা-শিল্পপতিরা সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় এগিয়ে এসেছিলেন। এই উদ্যোগপতিদের সিংহভাগই ছিলেন বর্ণাশ্রিত হিন্দু সমাজের উচ্চবর্ণের। ব্যবসার স্বার্থে কোম্পানিগুলি অন্তত বুঝতে শিখেছিল যে কাজের বাইরেও কর্মচারীদের বেঁচে থাকতে গেলে অতিরিক্ত কিছু প্রয়োজন। কালচিনি চা বাগিচায় একটা ক্লাব বাবুদের জন্য ছিল। সেটাই ছিল বাঙালিবাবুদের সংস্কৃতি চর্চার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। কালচিনি, ডিমা এবং গাংগুটিয়া চা বাগানের বাবুদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এই ক্লাব। নাম ছিল ডিমা-গাংগুটিয়া ক্লাব। নিদেনপক্ষে বাবুদের জন্য যে এ বিষয়ে কিছুটা ভাবা হত তার একটা নিদর্শন এই স্টাফ ক্লাব। এই ক্লাবটি একসময়ে ডুয়ার্সে দুর্গাপুজো, বাগিচায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক যাত্রা থিয়েটার ইত্যাদি বিষয়ে একটা বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল।
সেবার ছুটিতে বাগিচা সফরে হ্যামিলটনে শ্যালকের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে শ্যালক আর তার অষ্টম বর্ষীয় সন্তান এই তিনজনে চলে এসেছিলাম ইউরোপীয়ান ক্লাবে। ভোরবেলা সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রাতঃভ্রমণে বের হয়েই এই পরিকল্পনা। রেললাইন পেরিয়ে তিনজন চলা শুরু করেছিলাম চা-বাগান ভেদ করে শুয়ে থাকা সরু পথটি ধরে। ঘাস আর মাটিতে মেশা এই রাস্তা সূর্যোদয়ের সময় শিশিরস্নাত। সবে ভোর হচ্ছে, অতিকায় শিরীষ গাছগুলির ডালপালা, পাতার বাধা ডিঙিয়ে অগুন্তি আলোর ধারা মাটিতে এসে গেঁথে গেছে। ধীরে ধীরে আলোর রং পাল্টে যাচ্ছে। পাখিরা এলোমেলো ডাকছে। পৃথিবীর ঘুম ভাঙছে। শ্যালকের সতর্ক নিদান ‘ইউরোপীয়ান ক্লাব’ দূর থেকেই দেখতে হয়। যেমন নাকি সাহেবদের কুঠিতেও হঠাৎ ঢুকে পড়তে নেই। শ্যালক আমার থেকে বছর পাঁচেকের ছোট হলেও পঞ্চাশ অতিক্রান্ত। তাই কালচিনির অনেক কিছু ওর নখদর্পণে। ওর কাছ থেকেই শুনলাম “বড়সাহেবের কুঠির কাঠের তৈরি বিরাট গেটটি সর্বদা বন্ধই থাকত। স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখতে পেতাম সাহেবের বিরাটাকার ব্যাঘ্র-সদৃশ সারমেয়টি সবুজ ঘাসের লনে পায়চারি করছে। সাহেবের দুই কন্যা দার্জিলিং কনভেন্টে পড়াশুনো করে ছুটিতে বাড়িতে এলে নেপালি আয়ার তত্ত্বাবধানে ছুটোছুটি করত বাগানে”। এসব দূর থেকে দেখবার দৃশ্য বর্ণনা করছিল শ্যালক। নানা কথায় ও গল্পে আমরা পথ ভাঙছিলাম। মাইল দেড়েক হাঁটার পর চা-বাগান পাতলা হয়ে এসেছিল। দূরে উঁচু তারের বেড়ার ওপারে ইউরোপীয়ান ক্লাবটিও দৃষ্টির সীমায় এসে গেল একসময়। তারের বেড়ার ওপারেও অনেকটা ঘাসের জমি। চালতা গাছ আর কুলগাছের জঙ্গল, তারপর ফাঁকা জমিতে ফণীমনসা, পুটুস আর ত্রিশিরার ঝোপ। তারপর টেনিস কোর্ট। তারপর দাঁড়িয়ে আছে সবুজ চাল আর সাদা দেওয়ালের ক্লাব-ঘরটি। আমরা তিনজন তারের বেড়ার গায়ে হাত দিয়ে তাকিয়ে থাকি সেই বাড়ির দিকে।
একটা ক্লাব বাবুদের জন্যেও ছিল। সেটাই ছিল বাঙালিবাবুদের সংস্কৃতিচর্চার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। কালচিনি এবং পাশের গাঙ্গোটিয়া চা-বাগানের বাবুদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে এই ক্লাব। নাম ছিল ‘ডিমা-গাঙ্গোটিয়া স্টাফ ক্লাব।’ কালচিনি এবং আশেপাশের অঞ্চলের বাগিচা সংস্কৃতি চর্চাতে এ ক্লাবটি একটি বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। অনেকটা জমি নিয়ে এই ক্লাব। ক্লাব বাড়িটা ছিল দীর্ঘ ও প্রশস্ত। পর্যাপ্ত জানালা-দরজা। ভেতরে কাঠের তৈরি স্টেজ, বেতের অনেক চেয়ার পাতা। নাটক বা অন্য অনুষ্ঠান চলাকালীন গিন্নিরা বসতেন সামনে। ত্রিপলের ওপরে শতরঞ্চি পাতা থাকত। পেছনে বাবুরা চেয়ারে। ক্লাবের সামনে সুন্দর ফুলের বাগান ছিল। সিঁড়ির দু’ধারে চন্দ্রমল্লিকা ফুটত, জ্যোৎস্না রাতে তাদের রূপ খুলত। সে সৌন্দর্য ব্যাখ্যা করা বেশ কঠিন কাজ। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষে ও বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে জলপাইগুড়ি শহরে নবজাগরনের যে ঢেউ লেগেছিল তা চা বাগানেও প্রসারিত হয়েছিল। বিভিন্ন বাগানে শিক্ষিত ম্যানেজার, বাবুদের উদ্যোগে গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। ১৯২৫ সালে রানিচেরা বাগানের ম্যানেজারের সক্রিয় সহযোগিতায় গড়ে ওঠে ডামডিম ফ্রেন্ডস ক্লাব। বই পড়া, খবরের কাগজ পড়া, নাটক করা, থিয়েটারের আয়োজন করা প্রভৃতি ছিল এই ক্লাবের উদ্দেশ্য। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাগানের অন্যান্য কর্মচারীরা ক্লাবে আসতেন ও রাত্রে ক্লাবেই খাবার ব্যবস্থা থাকতো। গয়েরকাটা বাগানের কাঠের দুইতল গৃহে একদিকে ছিল বই ভরা আলমারি, অন্যদিকে তেমনি থাকতো শরীরচর্চা ও গানবাজনার সরঞ্জাম। শ্রমিকদের বিনোদনের জন্য প্রতি মাসে একবার সন্ধ্যাবেলায় এখানে থিয়েটারের আসর বসতো যার সূচনা হতো কারখানার ভোঁ আওয়াজ দিয়ে। নাগরাকাটা অঞ্চলের বাগানগুলিতে এই সকল সাংস্কৃতিক উদ্যেগ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে হিলা, ঘাটিয়া চা বাগিচাগুলি ব্যাপক ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। ( এরপর পরবর্তী পর্বে)
(এই প্রবন্ধটি লিখতে গিয়ে বহু লেখকের লেখনি থেকে তথ্য অনুসন্ধান করেছি, সংগ্রহও করেছি বিচ্ছিন্নভাবে। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ উত্তরবঙ্গ সংবাদ, আনন্দবাজারের পুরনো পেপার কাটিং, পরম শ্রদ্ধেয় ভ্রামণিক গৌরীশঙ্কর ভট্টাচার্যর লেখা থেকে সংগৃহিত কিছু তথ্য, আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আনন্দগোপাল ঘোষ, শ্রদ্ধেয় সুপম সরকার, অগ্রজপ্রতিম প্রয়াত অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, বিশিষ্ট বন্ধু এবং আমার বাগিচা সফরের মেন্টর সহজ উঠোনিয়া অমিত কুমার দে, এখন ডুয়ার্সের মাসিক সংখ্যা, রাম অবতার শর্মা স্যার, তিতিরের চা বাগিচা বিষয়ক লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক সঞ্জয় কুমার সাহা প্রমুখের কাছে)
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴