লাল পরী-১০/মধুপর্ণা রায়
লাল পরী/১০
মধুপর্ণা রায়
ঘুম থেকে টেনে তুলবে ওকে শাক্য। এক রাতে পাঁচ হাজার টাকা এমনিই দেবে নাকি?
:-- এ্যাই মেয়ে, এ্যা....ই মেয়ে..... ওঠো! ওঠো তো.....অনেক ঘুমিয়েছ। শাক্য প্রায় ধমকে উঠল।
চোখ খুলে তাকাল মেয়েটা। অসম্ভব স্পষ্ট। জেগেই ছিল নাকি? চোখ খুলেই পাতা কাঁপিয়ে হাসল।:-- কী চাই?
শাক্য একটু থমকে গেল। বলল:-- দিব্যি তো ঘুমোচ্ছিলে।
উঠে বসল মল্লিকা। শরীরে বিদ্যুৎ মোচড় দিয়ে বলল
:-- তাই মনে হল? ডেকেছেন তো একবার। তাও ছোটলোকের মত।
শাক্য স্তম্ভিত হয়ে গেল।
মল্লিকা বলল :-- আমার ডিউটির জন্য আমি শালা সবসময় রেডি থাকি। অত বারফাট্টাই মারবেন না। কাজ করব, টাকা নেব। কারো পায়ে আমরা তেল মাখাই না।
শাক্যর বুকে বল গড়া। তেল..... তেল..... তোষামোদ...... লবির সদস্যপদ....... একে ছোটো করে, ওকে বড় দেখিয়ে...... এমনকি টাকার লেনদেন..... শাক্য সিনহা তুমি কি লেখক?! সেল বাজছে। শাক্য দেখল, ভোর এল বলে। জানলার শার্সির ওপারে পাখির ডাক। পাতায় পাতায় স্খলিত কুয়াশা। অন্ধকার বেঁকে ভেঙে আলো আসছে..... মাতাল মাতাল আলো।
-- বলছি। বল।
--- শাক্য, তোমাকে একটা খবর এক্ষুনি দিয়ে ফেলি!
--- হয়েছেটা কী?
--- বিরক্ত হয়ো না শাক্য। আর কখনো ফোন করব না।
--- আচ্ছা আচ্ছা। বল।
--- কাল রাতে..... অনেক রাতে অনিরুদ্ধ ফোন করেছিল। পাঁচ বছর পর।
--- সে আবার কে?...... ওহ! ওই সেই তোমার কৈশোরের প্রেমিক তো? হঠাৎ?
--- ও দেশে ফিরছে। অন্য দেশে আর মাথা বিকোবে না। আমরা বিয়ে করছি। এটা সিদ্ধান্ত।
এবার বুঝি জীবনানন্দ! একেই বোধহয় বলে উটের গ্রীবার মত স্তব্ধতা! বুকের ভেতরে উড়ছে হা হা করা বসন্তধুলো। শাক্য যেন বিচ্ছেদের ছিন্নতায় এসে দাঁড়াল। বলল-- কবে?!
--- ও এলেই ডেট ঠিক হবে।
--- এ সিদ্ধান্ত কেন নিলে রঞ্জা? আমার সঙ্গে সম্পর্কের সবটুকুই কি ফাঁকি?!
--- তুমি একথা বলছ শাক্য?! তুমি?!
ব্যথা নয়। স্পষ্ট বুঝল শাক্য। শ্লেষ।
--- মধুমন্তীদিকে ফোন করেছিলাম। জেগেই ছিল। ঘুম ভাঙাই নি।
শাক্য শব্দহীন রইল।
রঞ্জা বলে যাচ্ছে.....-- মধুমন্তীদি বলল-- খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছ। তবে কাউকেই সম্পূর্ণ বিশ্বাস কোরো না। আরো বলল-- রঞ্জা, তুমি ঈশ্বর মানো? বললাম -- মানি। বলল-- তবে আর ভয় নেই। সে--ই তোমার সম্বল হয়ে থাকবে। আমার ঈশ্বর নাচ। আমার সম্বল।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴