বিবর্তনের পথে শহর দার্জিলিং-১০/রূপন সরকার
বিবর্তণের পথে শহর দার্জিলিং
পর্ব-১০
ড. রূপন সরকার
দার্জিলিংয়ের সাথে সমতলের যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য আরো বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তিস্তা-ভেলি রোড। এই রাস্তাটি সেবক থেকে তিস্তা ব্রিজ হয়ে সিকিম ও তিব্বত পর্যন্ত এবং আরেকটি রাস্তা ঋষি রোড, কালিংপঙ এবং তিব্বত পর্যন্ত প্রসারিত করা হয়। যদিও ১৮.৫ মাইল এই রাস্তাটির এক বিরাট অংশ ১৮৯৯ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও সীমান্তবর্তী একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা দার্জিলিংকে সিকিম ও তিব্বতের সাথে যুক্ত করেছিল। তৎকালীন ডেপুটি কমিশনারর দেওয়া একটি তালিকা অনুযায়ী দার্জিলিংয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির চিত্রটি ধরা পরে। এই তালিকা থেকে যে রাস্তাগুলির নাম পাওয়া যায় সেগুলি হলো ইম্পেরিয়াল রোড, যার দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল পাবলিক ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্ট, নিউ কার্ট রোড, পাঙ্খাবাড়ি রোড ইত্যাদি। এছাড়াও বেশ কিছু রাস্তা স্থানীয় তহবিল থেকে ডেপুটি কমিশনার দেখাশোনা করতেন। এই রাস্তাগুলির বেশির ভাগই ছিল কাঁচা। খুব কম সংখ্যাক রাস্তা তখনও পর্যন্ত পাঁকা করা সম্ভব হয়েছিল। এই সমস্ত রাস্তার সংখ্যা ও বিস্তার থেকে দার্জিলিং শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না।
বহির্বিশ্বের সাথে শহর দার্জিলিংয়ের যোগাযোগ বৃদ্ধির সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে শহরের অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটও সমানতালে গড়ে উঠতে থাকে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন ও দার্জিলিং পৌরসভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাস্তা হলো এশলে রোড, অকল্যান্ড রোড, ব্রিচ হিল রোড, জলাপাহাড় রোড, লেবং রোড, কাছারি রোড, লোচনাগর রোড, মেকেনজি রোড, মল রোড, রঙ্গিত রোড, কমার্শিয়াল রোড, কনভেন্ট রোড, ওল্ড পি এন্ড টি রোড, ডিস্পেনসারি রোড, হারমেন্স রোড, হুকার রোড, জিগজাগ কার্ট রোড, সল্ট রোড, ভিক্টোরিয়ান রোড, ট্রায়ওয়ে রোড, ওল্ড ক্লাব রোড, সুইপার্স রোড, ব্যাঙ্ক রোড ইত্যাদি ছোট বাড় বহু রাস্তা শহরের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে মসৃণ করে তুলেছিল। উনবিংশ শতকের অন্তিম লগ্নে দার্জিলিং শহরের পৌর সীমার মধ্যে কাঁচা-পাকা নিয়ে সব মিলিয়ে আনুমানিক ৪৪ মাইল রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। বিংশ শতকের প্রথম সারে চার দশকে প্রাক-স্বাধীনতা পর্যন্ত দার্জিলিং শহরের রাস্তাঘাট আরো উন্নত করা হয়ছিল। এই সমস্ত রাস্তাগুলি দার্জিলিং পৌরসভা দেখাশোনার দায়িত্বে। মনে রাখতে হবে দার্জিলিং ছিল একান্তভাবেই ইউরোপীয়দের স্বাস্থ্য উদ্ধার কেন্দ্র। স্বাভাবিকভাবেই শহরের ইউরোপীয় নাগরিকদের উপস্থিতি ছিল অন্যান্য শহরের থেকে অনেক বেশি। সুতরাং দার্জিলিং শহরের রাস্তাঘাট সম্পর্কে ইংরেজ প্রশাসন অতিরিক্ত নজর দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। শহরের বাইরের জেলার বাকি রাস্তাগুলি বাগিচা মালিকরা চুক্তি ভিত্তিতে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতেন। সব মিলিয়ে বিংশ শতকের শেষ দিক পর্যন্ত নগরায়ণের অন্যতম শর্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে দার্জিলিং কোন অংশেই পিছিয়ে ছিল না, যা পর্যায়ক্রমে শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছিল।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴