শূন্য আমি পূর্ণ আমি/১
শূন্য আমি পূর্ণ আমি
পর্ব : ১
অমর চক্রবর্তী
******************
কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছি না! অখ্যাত অকিঞ্চিৎকরদের ক্ষেত্রে এই বিড়ম্বনা! তবে প্রিয় অমিতের চাহিদা মেটাতে জীবনকথা দিয়ে। জীবন যাকে উদ্দেশ্য করে কি আমি বলতে পারব 'কী ধন তুমি এনেছে ভরি দুহাতে' বরং পরের কথাটুকুই সত্য-- 'অমন করি যেও না ফেলি ধুলাতে'।
আজো কানে বাজে পিতৃদেবের সেই হাহাকার 'কেন ভিটেমাটি ছেড়ে আসতে হল শূন্য হাতে!' কে উত্তর দেবেন? জিন্নাহ? গান্ধী না নেহেরু! কে দেবেন? মাউন্টব্যাটেন না রাডক্লিব। কে? পিতৃদেব বলতেন - আমাদের ভাগ্যবিধাতা। গাড়িটা আইসা থামল কুচবিহারে। সত্যেন্দ্র চক্রবর্তী আর রেখা চক্রবর্তী সন্তানদের বুকে করে নামলেন ইস্টিশনে সঙ্গে পাসপোর্ট ভিসা। সত্যেন্দ্র কুমার দেশভাগের পরপরই এদেশে এসেছেন একটা মাথা গোঁজার জায়গা খুঁজে গেছেন তারপর ছেলে বৌকে নিয়ে আবার।
কুচবিহার সবে ভারতভুক্ত হয়েছে। রিফিউজিদের জন্য সাবসিডিতে জমির পাট্টা দিচ্ছে। সত্যেন্দ্র কুমার পেলেন এক টুকরো জমি।
জমি হল এখন খাবার জুটবে কোথা থেকে! এদেশে অনেক জমি। চাষাবাদ একমাত্র পথ। ওপার থেকে আসা বহু চতুর মানুষ বিঘার পর বিঘা জমি জলের দরে কিনে নিচ্ছেন। এখানের মানুষ জন অতীব সরল ভালোবাসাকামী সবাইকে আপন করে নিতে জানে কিন্তু ওপার থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে আসা ব্রাহ্মণ সন্তান সত্যেন্দ্র করার মতো কোন বৃত্তি নেবেন!
কোচবিহার রাজার শহর। প্রজাবৎসল রাজাদের নির্মিত শহর যেমন পরিকল্পিত তেমনি পরিচ্ছন্ন। সত্যেন্দ্র কুমার যেখানে জমি পেলেন সেখান থেকে তোর্সা নদী খুব কাছে। বিস্তির্ণ অঞ্চল ফাঁকা। ঘর থেকে নদী দেখা যায়। সবে নতুন বাঁধ হয়েছে। এর আগে নদী চড়ায় নাকি বাঘ চলাফেরা করত। একটা বড় বন্যা হবার পর এই বাঁধ। প্রধানমন্ত্রী নেহেরু নাকি পরিদর্শনে এসে এই বাঁধের ব্যবস্থা করেন। এরকম এক জনমানবহীন অঞ্চলে!
পুজো আচ্চা বা পুরোহিত বৃত্তি হবে না এটাই স্বাভাবিক। রাজ আমলের মন্দির আর লৌকিক ব্রত আচার নিয়ে থাকেন এখানের আদি বাসিন্দারা। তবে ওপার থেকে ক'ঘর সাহা পরিবার এসেছে তাদের পুজোতে ডাক পেতে শুরু করলেন সত্যেন্দ্র কুমার। কিন্তু তা দিয়ে তিন সন্তান স্ত্রীর ভরনপোষন সম্ভব নয়। দিনরাত তিনি খু্ঁজে বেড়াতেন ওপার থেকে আর কে কে এসেছেন। যেমন বৃত্তি থেকে আর একটু আয় হলে ছেলেদের ভালো খেতে দিতে পারতেন। ছোটটির জন্য দুধ রাখতে পারতেন। তিনি দেখতেন ওর মা চাল বেটে দুধের বদলে ছেলের মুখে দিচ্ছে। তিনি তো খুব বেশি টাকা পয়সা আনতে পারেননি! একটা ট্রাঙ্কে দু একটা জামা কাপড় শাড়ি ছেলেদের ইজের প্যান্ট সাহেবী টুপি আর গোপাল ঠাকুরের এক বাঁধানো মূর্তি। পঞ্চম জর্জের ষষ্ঠ জর্জের নামাঙ্কিত কিছু মুদ্রা। ভারতীয় কিছু টাকা। এক লাল পয়সা থেকে আধুলি। ধানের মণ তখন কুড়ি থেকে পঁচিশ টাকা। বসে খেলে রাজার গোলা শেষ হয়ে যায় আর তিনি তো সর্বহারা বামুনের ছেলে। এই সময়ে ওপার থেকে এলেন এক ধনী পরিবার। পূর্ব পাকিস্তানে তাঁর ছিল নামকরা এক বিড়ি ফ্যাক্টরি।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴