সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
07-April,2025 - Monday ✍️ By- শুভ্রজ্যোতি দাস 71

লে পাঙ্গা-১/শুভ্রজ্যোতি দাস

লে পাঙ্গা-১
শুভ্রজ্যোতি দাস

লাল, নীল, হলুদ, সবুজ

      বৃষ্টিটা এবার জোরেই নামল। চিন্তিত মুখে দিলীপদা বলল-"সুবীর, এরকম চলতে থাকলে তো ইন্ট্রা মুরাল এর বারোটা বেজে যাবে রে।" দিলীপদা আর সুবীর দুজনেই বীরনগর হাই স্কুলের ফিজিক্যাল এডুকেশন এর টিচার। দিলীপদার চাকরি আর চার বছর আছে। কোমরের ব্যাথায় কাহিল। নড়তে চড়তে ভালোই অসুবিধা হয়। ডাক্তার নাকি বলেছে স্লিপ ডিস্ক। সুবীর এই স্কুলেই পড়ত- দিলীপদার ছাত্র ছিল। বছর তিনেক হল চাকরি পেয়েছে- ছাত্র জীবনের স্কুলেই! এ জন্যই হয়তো - স্কুলের প্রতিটা কাজে সুবীরের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো।  সুবীর উদাস চোখে জানলা দিয়ে বৃষ্টি দেখছিল। মুখ না ঘুরিয়েই চিন্তিত গলায় বলল-"পনেরই আগস্ট ফাইনাল করতে গেলে আজ থেকেই ট্রায়াল শুরু করতে হয়। আর তো মাত্র দু’ সপ্তাহ বাকি।" কিছুক্ষণ চুপ থেকে সুবীরকে দিলীপদা বলল -"এক কাজ কর, আপাতত হাউসভিত্তিক কোচ সিলেকশনটা করে নিই। আর পরিচিত মুখ কে, কোন হাউস -এ আছে- সেই লিস্টটা বানিয়ে ফেল। বাকিদের সিলেকশন দু’দিনেই করে ফেলা যাবে।"

সুবীর আসার পর থেকেই এই হাউস ভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্টটা চালু হয়েছে। দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে স্কুলে। ছাত্ররা তো বটেই, শিক্ষকরাও আগ্রহ নিয়ে এই টুর্নামেন্টের জন্য অপেক্ষা করে থাকে। ছাত্রদের রোল অনুযায়ী চারটা হাউসে ভাগ করা হয় - লাল, নীল, হলুদ, সবুজ। প্রতিটা হাউসের জন্য দু’জন শিক্ষককে কোচ হিসেবেও রাখা হয়। তারপর ওই চার হাউস এর মধ্যে লীগ পর্যায়ে খেলার পর সেরা দুই টিমের মধ্যে ফাইনাল - স্বাধীনতা দিবসের দিন। ওই দিন গোটা গ্রাম ভেঙে পড়ে স্কুলের মাঠে।

যেসব টিচার জীবনে কোনদিন ফুটবলে পা ছোঁয়ায়নি- কোচ হিসেবে তাদের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো! মরিনহো বা আর্সেন ওয়েঙ্গারের থেকে কেউ নিজেকে কম ভাবে না। সৌমেন যেমন- ম্যাচের আগে বন্ধ ঘরে টিম মিটিং করে। বোর্ডে ছবি এঁকে প্লেয়ারদের পজিশন বুঝিয়ে দেয়। আর কী কী বোঝায় তা অবশ্য বাকিরা জানতে পারে না - গোপন বৈঠক কিনা! আর একজন শুভাশিসদা। নাদুস নুদুস চেহারা- আগামী বছর রিটায়ার করবেন। শুভাশিসদার অস্ত্র স্লেজিং! ম্যাচ চলাকালীন হাত পা নেড়ে চিৎকার করে নিজের ছেলেদের উৎসাহ দেন। আর তার থেকেও বেশি চিৎকার করে বিপক্ষের সেরা প্লেয়ারদের স্লেজ করেন। আনকোরা সব কোচেদের তুমুল উৎসাহে আর আশ্চর্য সব অস্ত্রে টুর্নামেন্ট আরো জমে ওঠে।

তবে ব্যাপারটা সব সময় মজার পর্যায়ে থাকে না।  গতবার রেফারির ভুল সিদ্ধান্তে শুভাশিসদার লাল ভবন একটা বাজে গোল খেয়ে গেল। সাথে সাথে শুভাশিসদা মাঠে ঢুকে রেফারির উপর চড়াও হলেন। বেচারা রেফারিও স্কুলেরই ছাত্র - কাঁদো কাঁদো অবস্থা। বহু কষ্টে শুভাশিসদাকে মাঠের বাইরে নিয়ে আসা হল। ওই একটা গোলের জন্য লাল ভবন ফাইনালে উঠতে পারল না। শুভাশিসদা সাতদিন স্কুলে কারোর সাথে কথা বলেননি।

মিহির আর নিতাই গত তিন বছর ধরে নীল ভবনের দায়িত্বে। ফুটবলে মিহিরও জীবনে পা ছোঁয়ায়নি। তবে হ্যাঁ, রাত জেগে রিয়াল মাদ্রিদ আর বার্সিলোনার খেলা দেখে। মিহিরের অস্ত্র? ভোকাল টনিক! খেলা তেমন না বুঝলেও ছাত্রদের মনটা ও ভালোই পড়তে পারে। কোন ছেলেকে কীভাবে উদ্বুদ্ধ করলে তার সেরাটা বেরিয়ে আসবে - সেই ব্যাপারে মিহির অপ্রতিদ্বন্দ্বী! নিতাই বলে - "মিহিরদার ভোকাল টনিক এলোপ্যাথিকে টেক্কা দেয়।"

এবছরও নীল ভবনের দায়িত্বে মিহির আর নিতাই। এবারের টিমটা আহামরি নয়। ব্যাক -এ গৌরাঙ্গ আর শাজাহান ছাড়া তেমন পরিচিত মুখ নাই। বেশিরভাগ ছেলে আনকোরা। ইলেভেনের শুভঙ্কর অবশ্য আছে। শুভঙ্কর ভালো এথলিট। গত বছর লং জাম্প -এ জেলা পর্যায় পর্যন্ত গেছিল। কিন্তু ফুটবলটা কেমন খেলে কে জানে? গত বছর ইন্ট্রা মুরালে ও খেলেওনি। ভালো এথলিট যখন- খুব একটা খারাপ খেলবে না। সিনিয়র হিসেবে শুভঙ্করকেই টিমের ক্যাপ্টেন বেছে নেয় মিহির। নিতাই বলে -"যা টিম, এ বছর ফাইনাল -এ যাওয়াই কঠিন।"

হলুদ ভবনের এবারের টিমটা দারুণ হয়েছে। দেবজিত আছে - স্কুল টিমের ক্যাপ্টেন। ডিফেন্সে রফিক আর স্ট্রাইকার সুব্রত-স্কুলের তিন সেরা প্লেয়ার! দেবজিত আর রফিক এবছর জেলা লিগে উত্তর পাড়া ক্লাবের হয়ে খেলেছে।

টুর্নামেন্ট শুরুর ঠিক আগের দিন আকাশ একদম পরিষ্কার হয়ে গেল। যদিও শ্রাবণের আকাশের ভরসা নাই। ইলশে গুঁড়ি আর টিপটিপের মধ্যে বাছাই পর্ব সারতে হয়েছে। মাঠের চারধারে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ পতাকা পতপত করে উড়ছে। প্রথম খেলা সবুজ আর লালের মধ্যে। সব কিছু তৈরি, শুধু হেডস্যার এসে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেই হয়।

হেডস্যার দীপ্তেশ নন্দী কবি মানুষ। জীবনে মাঠের ধার ঘেঁষেও হাঁটেননি। দু’বছর আগের ঘটনার পর থেকে খেলাধুলার উদ্বোধনের দিন বেশ টেনশন -এ থাকেন। সেবার ফুটবলে লাথি মেরে খেলার উদ্বোধন করতে গিয়ে ভেজা মাঠে পা হড়কে আছাড় খেয়েছিলেন। ছাত্রদের মধ্যে তুমুল হাসির রোল উঠেছিল। ভালোই চোট পেয়েছিলেন।

দীপ্তেশবাবু মাঠে এলেন। ছোট একটা বক্তৃতার পর দিলীপদা ওনাকে সেন্টার লাইনের কাছে নিয়ে গেলেন। হেডস্যার এবার বলে লাথি মেরে খেলার উদ্বোধন করবেন। এবার ও মাঠ ভেজা। ছাত্রদের চোখে একটা চাপা কৌতূহল। দিলীপদা হেডস্যারের কাছে গিয়ে কানে কানে বললেন -"শুধু পা দিয়ে বলটা ছুঁইয়ে দিলেই হবে।" একটু শুকনো হেসে হেডস্যার বললেন -"ভেবো না, সকালে ছেলের বলে শট মারা প্র্যাকটিস করেছি। এবার পড়ব না।"

নাঃ, উদ্বোধন নির্বিঘ্নেই হয়ে গেল। দর্শক বোধহয় সামান্য হতাশই হল।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri