লাল পরী-১/মধুপর্ণা রায়
লাল পরী
মধুপর্ণা রায়
--: আপনি কী কাজ করেন?
জবাব শুনে ঠোঁটে কামড় রেখে মণি স্থির করে সে তাকিয়ে রইল।
--: লিখি। বলেই হাসল শাক্য। সে জানে, মেয়েটির কাছে এসব কথা মূল্যহীন। অমনি করে তাকিয়েই মেয়েটি বলল--: কী লেখেন? সিনেমার গপ্প? শাক্য কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ থেকে কাগজ- পেন্সিল- রঙ- তুলি বের করতে করতে বলল--: তাও লিখি। তবে সিনেমা হবে বলে লিখি না।
--: তবে?
--: ওই লেখার পরে আমার কিছু গল্প নিয়ে ফিল্ম হয়েছে। ওসব বাদ দাও। তোমার নামটা যেন কী?
--: মল্লিকা। আচ্ছা, ফ্লিম হলে টাকা পান অনেক। না?
শাক্য একবার ভাবল উচ্চারণটা শুদ্ধ করে দেবে। দিল না। বলল--: ওসব জেনে তোমার কী হবে?
--: বলুন না! মেয়েটার গলা আদুরে হল। হাসি পেল শাক্যর। সে বলল--: পাই।
--: কত টাকা পান?
বিরক্ত হচ্ছে শাক্য। --: ওসব কথা তুমি জেনে কী করবে? তোমার সঙ্গে যে কথা হয়েছে তার চাইতে এক টাকাও কম দেব না। তাহলেই তো তোমার হবে?
মেয়েটার চোখের তারা আবার স্থির হল শাক্যর মেখে। চট করে পাতা কাঁপিয়ে বলল--: আমার নাম মল্লিকা। লাইনের সক্কলে মলি বলে ডাকে। আপনিও ইচ্ছা করলে ডাকতে পারেন। এখন কি কাজ শুরু করবেন?
বলতে বলতেই বুকের আঁচল ফেলে দিল । হাঁ হয়ে গেল শাক্যর ভেতরটা। মেয়েটাকে নর্তকী মনে হল। কিন্তু সে বলে ফেলল--: কী করছটা কী এসব? হোয়াট ইজ দিস?!
শাক্যর মুখ থেকে চোখ টেনে অর্ধ বৃত্তাকারে সে ঘুরিয়ে নিল দৃষ্টি। --: উরি শাল্লা! আপনি কি কিছুই জানেন না?! সত্যি? মাইরি? শাক্য সিনহা অবাক হয়ে দেখল....ওই অর্ধ বৃত্তাকার দৃষ্টি বিভঙ্গ তার ভীষণ চেনা! কে যেন ঠিক অমনি করেই কথায় কথায় ঘুরিয়ে নেয় চোখ। ভারী মিষ্টি লাগে। অনেক ভক্ত নারী তার জীবনে। তাদের মধ্যে কেউ..... কেউ কেউ.....কে?!
--: হাঁ করে কী দেখছেন? খিলখিল করে হেসে উঠল মেয়েটা। হাসির তোড়েই সাপটে নিল আঁচল।
--: কী দেখছিলেন? আমার বুক? কেমন লাগল? সুন্দর?
সোজা তাকাল শাক্য মেয়েটার দিকে। --: সুন্দর কথাটার মানে জান তুমি? বোঝ?
--: নাহ। বলুন। শুনি। ছোট ছোট কাটা কাটা হয়ে এল শব্দ। মনে হল, মধুমন্তী! এমনি শব্দবন্ধে ছুঁড়ে দিত তাচ্ছিল্য। মেয়েটার দিকে তাকাল শাক্য। ঠোঁটের কোণ ভেঙে তাকিয়েই আছে।
শাক্য বলল--: থাক। তোমাকে এসব বলে কী হবে?
--: তাহলে আমাকে যে জন্যে আনলেন, তাই করুন।খামখা দেরি করছেন কেন?৷
মেয়েটা কি অপমানিত বোধ করল? শাক্য বলল--: তোমাকে তো আজ গোটা রাত থাকতে হবে। কথা তো সেরকমই। টাকাও তো সে হিসেবেই ঠিক হয়েছে।
গলায় ধার এল মল্লিকার। --: আপনি তখন থেকে কী এত টাকার গরম দেখাচ্ছেন বলুন তো? দুটো বই লিখে খুব টাকার গুমর হয়েছে.... না কি?
এই ভঙ্গি শাক্যর চেনা। ভাষার সামান্য অদল- বদলে শেষের দিকে এমনি করেই তো বলত মধুমন্তী। সে দেখছিল। আর অবাক হচ্ছিল। মেয়েটার ঠোঁটের ওপরে ডানদিকে মিশমিশে তিল। মধুমন্তীর গালের ওপর ছিল। শাক্য বলত-- আমার সব কষ্ট তোমার শঙ্খ রঙের গাল ধারণ করে আছে। ও--ইই তিলটাতে। মধুমন্তী তখন সোনার মতো গলত। তখন ওর সবটুকু নিজের সর্বস্ব দিয়ে শুষে নিতে চাইত শাক্য।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴