সুজাতা/রাকা মুখোপাধ্যায়
সুজাতা
রাকা মুখোপাধ্যায়
সুজাতার শরীরটা আজকে খুব আনচান করছে। স্কুল থেকে এসে জামাকাপড় ছেড়েই শুয়ে পড়ল বিছানায়। ভীষণ হাই উঠছিল তবু ঘুম হল না। কেমন যেন দমবন্ধ লাগছে। রোদটা একটু পড়তেই হাঁটতে বেরিয়ে গেল। তাও ভাল লাগছে না। খানিকটা গিয়ে ফিরে এল।
শাওয়ার খুলে অনেকক্ষণ তার ধারাস্রোতে স্নান করে বুঝি একটু আরাম হল। কী যে করবে সারাটা সন্ধ্যে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না, তার উপর কাল ছুটির দিন, অঢেল সময়।
দুদিন ধরেই মনটা খিঁচড়ে আছে কেমন। হাতের কাছে একটা গল্পের বই নিয়ে পড়তে শুরু করল, ভাল লাগল না। পাতা উলটে রেখে দিল। কবিতা… তাও ভাল লাগল না। অনেক কিছুই লেখা যায়, কিন্তু কেন যেন শব্দরাও আসছে না আর। হারিয়ে যাচ্ছে… হারিয়ে যাচ্ছে সবটা কেমন। ভীষণ ঘাম হচ্ছে আবার। কুলকুলিয়ে ঘেমে যাচ্ছে বুক, পিঠ, কপাল। নিজেই নিজের ঘাম মুছতে মুছতে হঠাত কার যেন ফেলে আসা স্পর্শ অনুভব করল। সেই যে সেবারে সে কপালে, গলায় জামার ভিতর দিয়ে পিঠে ঘাম মোছাতে মোছাতে বলেছিল,” এত ঘামছ কেন এই শীতে? ডাক্তার দেখাতে হবে তো!” কোন ডাক্তার দেখায়নি সুজাতা। যখনই এমন ঘাম হয়, সেই স্পর্শটা অনুভব করতে তার খুব ভাল লাগে।
ফুল স্পীডে ফ্যানটা চালিয়ে দিয়ে জানলাগুলো খুলে দিল সুজাতা। ফ্রিজ থেকে সল্টি ড্রাই ফ্রুটস আর ক্র্যানবেরির ডিবে বার করে ড্রয়িং রুমে নেটফ্লিক্স চালিয়ে বসল। কোকের বোতল বের করে গ্লাসে ঢেলে আস্তে আস্তে সিপ দিতে লাগল। ঘরের আলোগুলো নিবিয়ে দিয়েছিল। নেটফ্লিক্সের সিনেমা মানেই আজকাল শুধু খুন যখম আর ক্রাইম। একটার পর একটা মুভি পাল্টাতে পাল্টাতে কোনটাই ভাল লাগল না। দূর ছাই!
বন্ধ করে দিল নেটফ্লিক্সও। কিছু ভাল লাগছে না। অ্যালেক্সাকে বলে স্পটিফাইতে নিখিল ব্যানার্জির দরবারি কানাড়া চালিয়ে দিল। এই ক্র্যানবেরি আর ড্রাই ফ্রুটসের সঙ্গে সুরের আবেশে মন ভেসে গেল কোন সুদূরের স্মৃতিকথায়। স্পর্শ… ভীষণ একটা স্পর্শ চাইছে মন…সেই বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখার আশ্রয়টুকু…
ঘামছে সুজাতা … ভীষণ রকম ঘামছে। এপ্রিল মাস পরে গেলেও এখনও বসন্ত। শোবার ঘরেই মিউজিকটা চলছে। এসিটা চালিয়ে দিল। বুকের বাঁদিকটা একটু চিনচিন করছে। ঘুমোতে হবে। একটা গভীর ঘুম চাই। এমন একটা ঘুম আর যেন উঠতে না হয়…
দরবারীর ঝালা দ্রুতলয়ে বেজে চলেছে… সেই সাথে বুকের ব্যথাটাও। সীমার অ্যাস্ট্রোলজার বলেছিল সুজাতার নাকি এপ্রিল পেরোবে না। মরণ রে তুহুঁ মম শাম সমান…
বাইরের দরজার হাঁসকলটা খুলে রেখে একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে সুজাতা বিছানায় এলিয়ে পড়ল। ক্র্যানবেরি আর সল্টি ড্রাই ফ্রুটসের ডিবে খোলা পড়ে রইল ড্রয়িং রুমের টেবিলে।
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴