সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
22-March,2023 - Wednesday ✍️ By- নীলাঞ্জন মিস্ত্রী 770

শূন্যতা/নীলাঞ্জন মিস্ত্রী

শূন্যতা
নীলাঞ্জন মিস্ত্রী
------------------

আজ সুমিতকে রাগাতেই হবে। মনে মনে এমনই সঙ্কল্প করে বসল পাপিয়া।
অফিসে সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে সন্ধ্যা সাতটায় ঘরে ফেরে সুমিত। ঘরে পা রাখতেই পাপিয়া বলে ওঠে
-শোন না, আমায় একটু বিউটি পার্লারে নিয়ে যাবে?
-কখন?
-এখনই
-ঠিক আছে চলো।
বড্ড অবাক হয় পাপিয়া। তবুও আজ তার দৃঢ় পণ সুমিতের থেকে দুটো কটুকথা আজ তাকে শুনতেই হবে। তাই সে আর দেরি না করে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরে সুমিতের সঙ্গে। বিউটি পার্লারের বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে সুমিত। মনে মনে চ্যালেঞ্জ নিয়েছে আজ পাপিয়া। সুমিতের বিরক্তিমাখা মুখটা আজ তাকে দেখতেই হবে। ঘন্টাখানেক পর পার্লার থেকে বের হয় পাপিয়া। বাইরে এসে সে সুমিতের নির্লিপ্ত মুখটাই দেখতে পায়। কোথায় রাগ? কোথায় বিরক্তি? এ যে কিছুই নেই। সুমিতের রাগ বিরক্তিহীন মুখটা দেখে আরও রেগে যায় পাপিয়া।
-ভ্যালেন্টাইন ডে তে আমায় গিফট দেবে না?
-কি চাই তোমার বলো?
-আমি কেন বলবো? তুমি যা দেবে সেটাই নেব।
-না বলো তোমার কি চাই। যা চাইবে সেটাই দেব তোমায়।
মনটা খারাপ হয় পাপিয়ার। এ যেন রাগের মাঝে আর একটু ঘৃতাহুতি। নিজে থেকে না বললে যে এই স্বামী নামক মহাপুরুষটির কাছ থেকে কোনও উপহারই মিলবে না বুঝতে পারে সে। 
- ঠিক আছে একটা শাড়ি কিনে দাও আমায়।
-এখনই যাবে মার্কেটে?
-হ্যাঁ, এখনই চলো।
বড়সড় এক শাড়ির দোকানের সামনে গাড়ি পার্ক করে সুমিত। 
-যাও যেটা পছন্দ সেটাই নিয়ে এসো। এই নাও ডেবিট কার্ড।

ডেবিট কার্ড নিয়ে শাড়ির দোকানে প্রবেশ করে পাপিয়া। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে সুমিতের জন্য। সুমিত যে নীচে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়ির পাশেই। এদিকে আসবে বলে মনে হচ্ছে না। চোখ দুটো ভিজে যেতে চায় পাপিয়ার। একা একাই দোকানের ভেতর ঘুরপাক খায় কিছুক্ষণ। শাড়ি না নিয়েই ফিরে আসে গাড়ির কাছে। দরজা খুলে গাড়ির ভেতরে বসতেই সুমিত গাড়ি ছোটায় বাড়ির দিকে। 

নিজের বেডরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে পাপিয়া। গতকাল রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে লেখা তিন পাতার ভালোবাসার চিঠিটি বিছানার নীচ থেকে বের করে বেশ কয়েকবার পড়ে নেয় সে। রাগ-দু:খ, অভিমান নিমেষেই কোথায় যেন মিলিয়ে গেল তাঁর। ঘরে এনে রাখা বড়সড় সাইজের ডেয়ারি মিল্ক চকলেটটি ভালোবাসার র‍্যাপার দিয়ে মুড়িয়ে দেয়। নিজের চেক বইটি বের করে পঞ্চাশ হাজারের একটি চেক সুমিতের নামে লিখে লুকিয়ে রাখে ওয়াড্রফের ভেতর। সুমিত তখন অন্য ঘরে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।

বাচ্চারা পড়তে বসেছে অন্য ঘরে। সুমিতের কাছে এসে জোড় করে তাকে টেনে তোলে পাপিয়া। একটা লাল গোলাপ, চিঠি, চকোলেট আর চেকটি সুমিতের হাতে দিয়ে বলে-হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে ডার্লিং। 
-হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে। কিন্তু এই চেক কিসের?
-এটা আমার উপহার। আমার বেতনের টাকা থেকে দিয়েছি তোমায়।
-সব ঠিক আছে কিন্তু চেকটি আমি নিতে পারব না। ওটার কিসের প্রয়োজন? নিজের কাছে রাখো। তোমার কাজে আসবে।
-না তোমায় নিতেই হবে।
নি:শ্চুপ থাকে সুমিত। পাপিয়া খুব করে চাইছে সুমিত তাকে কাছে ডেকে নেবে। জড়িয়ে ধরে দুটো ভালোবাসার কথা শোনাবে। চিঠিটি রসিয়ে রসিয়ে পড়বে, প্রশংসা আরও কত কি। কিন্তু এসব কিছুই হয় না। 

পাপিয়া খুব রেগে যায়। ইচ্ছে করেই সুমিতকে রাগানোর জন্য যা ইচ্ছে তাই বলতে শুরু করে। কিন্তু সে পুরোপুরি আবার ব্যর্থ হয়। পাপিয়ার রুদ্রমূর্তি দেখে মিটিমিটি হাসতে থাকে সুমিত। সুমিতের হাসি দেখে পাপিয়াও হেসে ফেলে। কাছে এসে সুমিতকে জড়িয়ে ধরে সে সজোরে।
-শয়তান কোথাকার! আমি এমন এক মনের মানুষ চেয়েছিলাম যে আমায় বকবে, ঝগড়া করবে, রাগ করবে, আমি যা বলব তার বিরুদ্ধে যাবে, অন্য কোনও পুরুষের সাথে দেখলে রাগ করবে, ফোনে কথা বললে বিরক্ত হবে, আমায় শাসাবে। তুমি তো এর কিছুই না। স্ত্রীর প্রতি এই বিশ্বাস তোমার আসে কোথা থেকে?
দুই চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে পাপিয়ার। সুমিতের চওড়া বুকে মুখ লুকিয়ে বলে চলে
- তুমি শুধু আমার স্বামী না গো। তুমি আমার ভগবান। তুমি এতো ভালো কেন? একটু কি খারাপ হতে পারো না? শোনো,  তোমার টাকায় কেনা শাড়িটা আজ পরলাম না। শাড়িটা খুব খুব সুন্দর হয়েছে। ভাবছি আমাদের বিবাহবার্ষিকির দিনই পড়ব।

পাপিয়ার চোখে চোখ রাখে সুমিত। মুচকি হেসে বলে
-আজকের দিনে মিথ্যে বলতে নেই পাপিয়া। আমি জানি তুমি খালি হাতে বেরিয়ে এসেছ দোকান থেকে। কেন নিলে না? আমি সঙ্গে যাইনি জন্য? পছন্দ করে দিইনি জন্য?
এবার দুমদাম করে কয়েকটা কিল ঘুসি সুমিতের পিঠে বসাতে থাকে পাপিয়া। চুল ধরে সুমিতের মুখটা চোখের সামনে এনে অভিমানের সুরে বলতে থাকে
-শয়তান, সব জেনেও কেমন পরে পরে ঘুমাচ্ছে। আর আমি এদিকে.......থাক তোমার শুনে লাভ নেই।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri