সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
28-October,2023 - Saturday ✍️ By- . . . 422

শিক্ষক/চন্দ্রানী চৌধুরী

শিক্ষক 
চন্দ্রানী চৌধুরী 

ঘড়িতে তখন রাত প্রায় সাড়ে আটটা। ট্রেনে উঠে নিজের সিট খুঁজে বসতেই সামনের সিটের উঠতি যুবকের দিকে চোখ গেল। খুব সাধারণ বেশবাস। কোনোকালে দেখেছি বলে মনে হল না। অথচ যখনই ছেলেটির চোখে চোখ পড়ছে, তখনই  দেখছি আমার দিকে একদৃষ্টে দেখছে।ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না। আমার দিকে এমন ভাবে বারেবারে তাকাচ্ছে মনে হচ্ছে যেন কিছু বলবে। খুব বিরক্তিকর লাগছে। আমি একা মানুষ; বয়স হয়েছে। রিটায়ার করেছি বেশ কয়েক বছর হল। আজকাল অচেনা যাত্রীর সাথে আর কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কে জানে কার মনে কি আছে। অস্বস্তি নিয়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে বসে আছি। একটু পরেই খাওয়াদাওয়া সেরে সবার শোবার ব্যবস্থা শুরু হয়ে গেল। হঠাৎ হইহই শব্দ। যেদিক থেকে শব্দ আসছিল সেদিকে সবাই ছুটে গেলাম। দেখলাম এক ভদ্রমহিলা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছেন। চোখে মুখে জল ছিটিয়েও জ্ঞান ফেরানো যাচ্ছে না। সাথেও কেউ নেই। ট্রেনে হুলুস্থুল পড়ে গেল। কেউ বলে টিটিকে ডাকো তো কেউ বলে ডাক্তার ডাকো। 
হই হট্টগোলের মধ্যে কয়েকজন যাত্রী এসে উপস্থিত হল সেখানে। ওরা “সরুন সরুন আপনারা ভিড় করবেন না এখানে, ডক্টর চেকআপ করবেন” বলে আমাদের এক প্রকার ঠেলেই সরিয়ে দিলেন। ওদের পেছনে এলেন ডক্টর। তাকিয়ে দেখি ওমা এ যে সেই যুবক যাকে দেখে এতক্ষণ আমি বিরক্ত হচ্ছিলাম..... ভালো করে পরীক্ষা করে ডক্টর রোগিনীকে অনেকটা সুস্থ করে তুললেন। তারপর বাড়ি ফিরে কয়েকটা টেস্টের কথা বলে আবার নিজের জায়গায় শান্তভাবে এসে বসলেন। নিজের ব্যবহারে এবার আমি নিজেই লজ্জা পেতে শুরু করলাম। আজকে ট্রেনে যদি উনি না থাকতেন তাহলে ভদ্রমহিলাকে বাঁচানো যেত না। কিন্তু ছেলেটি যে নিরহঙ্কার সেটা ওর আচরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। নিজের মতো করে অনেক কিছুই ভেবে নিই আমরা। পরে দেখা যায় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে ভুল থাকে।
এমনটাই ভাবছি, হঠাৎ তাকিয়ে দেখি ছেলেটি উঠে আমার পাশে এসে বসেছে। মুখের দিকে তাকাতেই হঠাৎ করে আমায় প্রণাম করল। আমি কিছু বলতে যাব, তার আগেই বলল স্যার, আমায় চিনতে পেরেছেন? আমি সুমিত; আমাকে আপনি খুব ভালোবাসতেন। সবাইকে বলতেন “দেখ্ ত সুমিত ক্লাসে কত শান্ত হয়ে থাকে ; তোরা ওর মতো হ”। আমার এত বছরের শিক্ষক জীবনে কত কত ছাত্র এল আর গেল। আমি কী আর মনে করতে পারি? কিন্তু সুমিত আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে আমাকে মনে করানোর। “স্যার,অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে আছি। আপনি চিনতে পারেননি বলেই হয়তো বুঝতে পারেননি। আমি আপনাকে ঠিক চিনতে পেরেছি”। চিনতে না পারলেও খুব ভালো লাগছিল নিজের ছাত্রকে প্রতিষ্ঠিত হতে দেখে। ও বলেই চলেছে “আমি চেন্নাইতে থাকি। অনেকদিন পর এদিকে এলাম। স্যার, আপনি আমার আদর্শ; আমি সবসময় ক্লাসে বলা আপনার প্রতিটি কথা আজও মেনে চলার চেষ্টা করি। যে শিক্ষা আপনার কাছ পেয়েছি তা আমার সারা জীবনের সম্পদ।” আশেপাশের যাত্রীরা আমাদের কথোপকথন মন দিয়ে শুনছিল আর শ্রদ্ধা ভরে আমার দিকে তাকাচ্ছিল। আর আমি সন্তানসম ছাত্রের গর্বে গর্বিত বোধ করছিলাম। সারা জীবন ভেবে এসেছি শিক্ষক না হয়ে যদি আমি অন্য কোনো প্রফেশনে যেতাম ভালো হত। ধাপে ধাপে অনেক উন্নতি করা যেত। কিন্তু আজ শিক্ষক হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। শিক্ষক হয়ে যে সম্মান যে শ্রদ্ধা পেলাম তা কী আর অন্য কোন প্রফেশনে সম্ভব.....!

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri