সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
26-October,2023 - Thursday ✍️ By- তপেন্দু নারায়ণ রায় 379

ফেরা/তপেন্দু নারায়ণ রায়

ফেরা
তপেন্দু নারায়ণ রায়

শেষ বিকেলের আলো বিলম্বিত লয়ে গুটিয়ে নিচ্ছে নিজেকে। পড়ন্ত আলোর সাথে মৃদু বাতাস মিশে উড়ে যাচ্ছে নাম না জানা কোনো দেশে। পাহাড় চূড়ায় একাকী দাঁড়িয়ে নবীন ব্রহ্মচারী। ফিকে আলো আর ধীর লয়ের বাতাসের সাথে তার মন ভেসে চলেছে। এ পাহাড় ও পাহাড় ঘুরে ফিরে আসছে আবার নিজের কাছে। কখনও বা চলে যাচ্ছে মেঘের ওপারের কোনো নাম না জানা দেশে। সে দেশ তার কাছে অস্পষ্ট।মনের এই খেলা প্রাণপণে উপভোগ করছেন তিনি। ঠোঁটে মুচকি হাসি। শেষ বিকেলের এই মায়াবী দৃশ‍্য দেখতে দেখতে নিজের কুটিরে নেমে আসেন ব্রহ্মচারী।
এখন তার জপ-ধ‍্যানের সময়। এরপর চলবে গুরুর কাছে শাস্ত্র শিক্ষা। এখন তার ‘অদ্বৈত বেদান্ত’-এর শিক্ষার্জন চলছে।জেনে ফেলেছেন ‘ব্রহ্ম সত‍্য, জগৎ মিথ‍্যা’।এই চিন্তাই এখন তাকে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে।ব্রহ্মচারী জীবনের আগেও অদ্বৈত বেদান্তের এই কথা জানা ছিল তার। কিন্তু গুরুর কাছে শোনার পর, তিনি আর স্থির থাকতে পারছেন না। এই নিয়েই তার মন ডুবে থাকে সারাক্ষণ। অদ্ভুত এক অস্থিরতা কাজ করছে তার ভেতর। শুধু শেষ বিকেলের সূর্যাস্তের সময়ে মনটা একটু উদাস হয়ে যায়। চিন্তাটা কিছুক্ষণের জন‍্য পিছু ছাড়ে।
আজকেও ব্রহ্মচারী উঠে আসছেন পাহাড় চূড়ায়। শেষ বিকেলের মায়াবী দৃশ‍্য দেখে মন শান্ত করার জন্য তিনি উতলা। সারাক্ষণ ওই বাক‍্যবন্ধ নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে গিয়ে মন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই ব্রহ্মচারী উঠে আসছেন শান্তির ঠিকানায়। শ্বেতশুভ্র বসনের ওপর বিকেলের রোদ পড়ে তাকে নিষ্পাপ এক শিশুর মতন মনে হচ্ছে।আকাশে আর পাহাড়ের গায়ে আস্তে আস্তে মেঘ জমছে। মেঘ জমলে তার মন খারাপ হয়, সেই ছোটবেলা থেকেই এমনটা ঘটে তার। ঘাসের ওপর বসে গায়ে হাওয়া লাগাতে থাকেন ব্রহ্মচারী, মন ভালো করার ব‍্যর্থ প্রয়াসে। কিন্তু মেঘ গাঢ় হতে থাকে আরো। আর ব্রহ্মচারীর মন খারাপের তীব্রতাও বাড়তে থাকে। হঠাৎ মাকে খুব মনে পড়ে। কেমন আছে মা? মনের অন্দরটা টালমাটাল হতে থাকে। এর মধ‍্যে বোনটাও এসে জুটে যায়। বোনের কথা ভেবে মন ভাঙতে থাকে তার। বোনের কি বিয়ে হয়েছে এতদিনে? বাবা কি এখনও অমন করেই সংসারের ঘানি টানছেন।একের পর এক চিন্তা মাথায় আসতে থাকে বিদ‍্যুৎগতিতে। তার খেলার মাঠ, বন্ধুর দল, বুড়ো বটের তলায় মাষাণ মন্দির…।অবারিত চিন্তাস্রোত রুখতে ব্রহ্মচারী জোর চেষ্টা চালান। শুয়ে পড়েন ঘাসের ওপর।সন্ধ‍্যা প্রায় হয়ে আসে। প্রাক্ সন্ধ‍্যার মেঘের নীচে বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেন নবীন ব্রহ্মচারী। তার গায়ে ফোটা ফোটা ঘাম।

গুরু উঠে আসেন শিষ‍্যের খোঁজে। চূড়ায় শুয়ে তার প্রিয়তম শিষ‍্য। একদৃষ্টে লক্ষ‍্য করে চলেন শিষ‍্যকে। আলতো করে নিজের পরিধেয় চাদরটা তার গায়ে চাপিয়ে দেন তিনি। খানিক পাশে সরে গিয়ে বসে পড়েন ধ‍্যানে। জ‍্যোৎস্না বাড়তে থাকে, গুরুর ধ‍্যান আরো গভীর হয়। ওদিকে শিষ‍্য এখনও শুয়ে আছেন ঘাসের ওপর। মধ‍্যরাতে জ‍্যোৎস্না যখন তার চরম সৌন্দর্যের ডালি সাজিয়ে বসেছে, ঠিক তখনই হুঁশ ফেরে ব্রহ্মচারীর। চোখ মেলে দেখেন গায়ে গেরুয়া চাদর। বুঝে যান গুরুর কাজ। আস্তে আস্তে উঠে বসেন তিনি। কিছুটা দূরে খালি গায়ে ধ‍্যানমগ্ন তার গুরু। অপূর্ব সুন্দর লাগছে আজ তার গুরুকে। গুরুকে দেখে ব্রহ্মচারীর মন ভালো হয়ে যায়।চন্দ্রালোকিত জ‍্যোৎস্নায় উঠে দাঁড়ান ব্রহ্মচারী। শিরশিরে বাতাসে ঠান্ডা আভা।চারপাশের পাহাড়গুলো পূর্ণিমার আলো ফুটে আছে। নিজেকে হারাতে থাকেন তিনি। অদ্ভুত এক আনন্দে লাফাতে শুরু করেন তিনি। সাক্ষী থাকে ভরা পূর্ণিমার চাঁদ।

কতক্ষণ কেটে গেছে টেরই পাননি ব‍্রহ্মচারী। তার নাচ থামছেই না। ঊষার আলোয় ধ‍্যান ভেঙে গুরু দেখেন শিষ‍্যর এমন কীর্তি। গুরু মুচকি হাসেন, শিষ‍্য যে বন্ধন ছিন্ন করতে পেরেছেন। ফিরে এসেছেন সত‍্যের পথে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri