সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
27-October,2023 - Friday ✍️ By- ভাস্বতী রায় 452

অপ্রাপ্তি/ভাস্বতী রায়

অপ্রাপ্তি
ভাস্বতী রায়

আজ তাতাই এর জয়েনিং, তাঁর খুব বায়না পিসিকে ওর সঙ্গে কলেজে যেতে হবে। পারমিতার কোন না-ই সে শুনতে নারাজ। অগত্যা একমাত্র ভাইপোর আবদার ফেলতে না পেরে রাজি হল। গাড়িটা যত কলেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, হুহু করে সব পুরনো স্মৃতি ধাক্কা মারছিল পারমিতার বন্ধ দরজায়। আজ প্রায় পঁচিশ ছাব্বিশ বছর পর আবার একই জায়গায়। ঠিক কি হবে? এলোমেলো ভাবতে থাকে পারমিতা।

"পারমিতা"- বছর পঞ্চান্নর পারমিতা, ফর্সা ছিপছিপে চেহারা, মাথার প্রায় বেশিরভাগ অংশ পাকা চুলে ছেয়ে গেছে, ডাগর ডাগর দুটো চোখে হালকা কাজলের আভা সঙ্গে হাই পাওয়ারের চশমা, ঠোঁটে লাইট পিংক শেডের লিপস্টিক, পরনে নেভি ব্লু ঢাকাই। দেখলেই বোঝা যায় বয়সকালে বেশ সুন্দরী ছিলেন। পেশায় বাংলার শিক্ষিকা পারমিতার গোটা জগৎ তাঁর একমাত্র ভাইপো তাতাই।
"তাতাই"- তাতাই এর ভালো নাম অভিমন্যু। তাতাই এর বয়স যখন আড়াই তিন বছর তখন এক পথ দূর্ঘটনায় ওর বাবা মা মারা যায়। সেই থেকেই তাতাই পিসির কাছে মানুষ। পিসির চোখের মণি তাতাই আজ অঙ্কের অধ্যাপক হয়ে কাজে যোগ দিতে যাচ্ছে। তাঁর কাজের জায়গা দেখাতেই পিসিকে নিয়ে যাওয়ার বায়না।
গাড়ির দরজা খুলে যখন কলেজের গেটে নামলো পারমিতা, ওর গা পুরো হিম হয়ে গেল। অবিকল এক আছে কলেজটা, সেই শেষদিন যেমন দাঁড়িয়েছিল গেটের সামনে। চরম অপমানে সেদিন ওর মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল, ভীষণ রাগ হচ্ছিল নিজের অনুভূতিগুলো আয়ত্বে না রাখতে পারার জন্য। সেদিনের পর থেকে প্রাণোচ্ছল, ডাকাবুকো, নির্ভীক কিন্তু ভালোবাসায় মোড়া মেয়েটি কেমন যেন লজ্জায় অপমানে গুটিয়ে গিয়েছিল।
পুরো ঘটনাটা জানতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে পঁচিশ ছাব্বিশ বছর পেছনে, এমনি কোনো এক দিনে। অতনুর সঙ্গে পারমিতার আলাপ তারও চার বছর আগে। খুব সিনেম্যাটিকভাবে ওদের আলাপ হয়েছিল। দুজনে তখন সদ্য চাকরিতে যোগ দিয়েছিল। পারমিতা বাংলার স্কুল শিক্ষিকা আর অতনু অঙ্কের অধ্যাপক। দুজনের কাজের ক্ষেত্র আলাদা হলেও কাজের জায়গা ছিল এক‌‌। একদিন এক বৃষ্টি মুখর দিনে বাড়ি ফেরার শেষ বাসটায় কোনক্রমে দৌড়ে উঠে পড়ে দুজনে। সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য যে কারণেই হোক দুজনে পাশাপাশি জায়গা পেয়ে যায়। প্রাত্যহিক যাত্রী বলে স্বাভাবিকভাবেই দুজনের কিছু কথা বিনিময় হয়। এই দেখা পারমিতার মনে বেশ খানিকটা দাগ কেটে ফেলে। যাহোক তারপর অনেকদিন তাদের আর দেখা হয়নি। পারমিতাও ভুলে যায় সেদিনের ভালোলাগার আবেশ। কিন্তু পারমিতার জন্য বোধহয় অন্যকিছুই অপেক্ষা করছিল। বেশ কিছুদিন পর বাড়ি ফেরার জন্য বাসের অপেক্ষায় ছিল, হঠাৎ শুনতে পেল "ম্যাডাম ভালো আছেন তো?" ফিরে তাকাতেই দেখতে পেল তার সেই কাঙ্ক্ষিত মুখ। পারমিতার মনে একটা শিহরণ জাগল। সেদিন দুজনের ফোন নম্বর দেয়া নেওয়া হল। এরপর মাঝে মাঝেই তাদের দেখা হতে লাগল। খুব অল্পদিনেই দুজনের মধ্যে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। কত একে অপরের জন্য অহেতুক অপেক্ষা করা,  ঘুরতে বেড়িয়ে পড়া, এমন কি একসঙ্গে সিনেমা দেখাও হত। কিন্তু পারমিতা কখনও মনের কথা বলতেই পারেনি। একদিন অতনু পারমিতার হাতে হাত রেখে বলল "বল এই হাত কখনোই ছাড়বে না।" পারমিতা যেন একটা ভরসার আঙুল পেয়েছিল। আনন্দে নেচে উঠেছিল পারমিতার মন। বেশ স্বপ্নের মতো কাটছিল দিনগুলো। কিন্তু হঠাৎ কি হল অতনুর?  কিছুদিন ধরে পারমিতা লক্ষ্য করছে ওকে কেমন যেন এড়িয়ে চলছে অতনু। দেখা খুব কম হত, ফোনে যোগাযোগও কমতে থাকে। পারমিতা ফোন করলে ব্যস্ততার অজুহাতে কাটিয়ে দেয়। নিজের থেকে হয়তো সপ্তাহান্তে ছুটির দিনে ফোনে একটু কুশল বিনিময় হয়। এরপর পারমিতা একদিন জানতে পারলো অতনুর বিয়ের কথা। কিন্তু অতনুর প্রতি পারমিতার অনুভূতি একই থেকে গেল। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব করে কী আর ভালোবাসা হয়! মাঝে মাঝেই ফোনে অতনুর খোঁজ খবর নিত। অতনুর প্রত্যেকটা জন্মদিনে উইশ করা, উপহার পাঠানো সবই নিয়ম করে করত পারমিতা। আলাপের পর একটা দিনও অতনু ছাড়া নিজেকে ভাবেইনি পারমিতা। অতনুর প্রিয় লাল রংটা যেন পারমিতার গায়ের চাদরে মেখে থাকে। অবশেষে সেই দিনটা আসে, কদিন আগে অতনুর জন্মদিন ছিল। প্রত্যেকবারের মতো সেবারও নিয়ম করে উপহার কিনেছিল। বহুদিন অতনুর সঙ্গে দেখা হয়নি, তাই ভেবেছিল এবার দেখা করে হাতে দেবে উপহারটা। অনেক ভাবনাচিন্তা করে ফোনটা করেই ফেলল,  "আজ একটু দেখা হতে পারে?" অতনুর উপেক্ষার স্বরে উত্তর - "সারাদিনে প্রচুর ক্লাস, সময় পেলে দেখা হবে।" পারমিতার প্রত্যুত্তর ছিল "আমি অপেক্ষা করবো, তুমি ফ্রী হলে জানিও।" সারাটাদিন অপেক্ষায় কাটলো কিন্তু অতনুর ফোন এলো না। শেষমেষ সাড়ে চারটা পাঁচটা নাগাদ, কলেজ ছুটির সময় পারমিতা কলেজের গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ততক্ষণে কলেজ ফাঁকা হয়ে গেছিল। দাড়োয়ানকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল অতনু অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে। অপমানে, অভিমানে, লজ্জায় সেদিন ধুলোয় মিশে যেতে ইচ্ছে করছিল। বাড়ি ফিরে অনেক বড় বড় অভিমানের মেসেজ করেছিল পারমিতা কিন্তু অপর পক্ষ নিরুত্তর ছিল। তারপর আর যোগাযোগ হয়নি। বদলি নিয়েছিল পারমিতা। না বিয়ে করেনি সে। ভাই, ভাই এর স্ত্রীর মৃত্যুর পর তাদের একমাত্র সন্তানকে বড় করে তোলাই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য। অতনুর খোঁজ রাখবার চেষ্টা করেনি আর।
আজ তার তাতাই নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে। তাই তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও পঁচিশ বছর পর একই কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে বুকটা টনটন করে উঠল। আচ্ছা অতনুর সঙ্গে কি মুখোমুখী হবে? কেমন আছে ও? হয়ত স্ত্রী, সন্তানসন্ততি নিয়ে বেশ সুখেই আছে! তারও হয়তো চুলে পাক ধরেছে, চোখে হাই পাওয়ারের চশমা উঠেছে? আচ্ছা এখনও ওর লাল রং ভালো লাগে? পারমিতাকে কী চিনতে পারবে, নাকি না চেনার ভাণ করবে? আচ্ছা অতনু কখনও ভালোবাসেনি না ওকে? হাজারো প্রশ্নে মন উতলা হয়ে ওঠে। সম্বিত ফেরে তাতাই এর ডাকে।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri