সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
25-October,2023 - Wednesday ✍️ By- সুদীপা দেব 472

অজানা ভাইরাস/সুদীপা দেব

অজানা ভাইরাস
সুদীপা দেব

সকালে কমোডে বসে ফেসবুক  স্ক্রোল করতে করতে  'দৈনিক সংবাদ'র  নিউজ পোর্টালে চোখ আটকে গেল অনিরুদ্ধর। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না। কনফার্ম হওয়ার জন্য দু'বার খবরটা পড়ল। ছবিতে বিজয়সুন্দরকে পরিষ্কার চেনা গেলেও তার পারিবারিক ছবিতে স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েদের দেখে ভীষণ অবাক লাগছে। দশদিন আগেও যার সাথে এত ব্যক্তিগত কথা হল সেই মানুষটার সব কিছু আজ... ! ভেতরটা কেমন অস্থির করছে। শর্মিষ্ঠাকে জানাতে ইচ্ছে করছে ও ঠিক আছে তো! ইস বুকের ভেতরটা তোলপাড় করছে। খবরটা দেখার পর থেকে গা হাত পা ছ্যাত ছ্যাতে লাগছে।

দিল্লি থেকে অনিরুদ্ধর ফোন।
–দু'দিন ম্যানেজ করতে পারবি? তোকে নিয়ে ডুয়ার্সে ঘুরতে যাব।
–আর কে যাবে?
– শুধু তুই আর আমি।
–পাগল হলি! বাড়িতে জানলে রক্ষে আছে?
 –তোর জন্য পাগল হতেও রাজি। বাড়িতে  বলবি এক্সট্রা ডটেড প্রোটেকশন নেব।
–তুই এত বাজে কেন রে!
–ঠিক আছে বলিস আমরা আলাদা শোব।আরে, মা দুনিয়ার খোঁজ খবর চালাতে শুরু করে দেবে। এত প্রশ্ন করতে থাকে ভীষণ ঘাবড়ে যাই। আমি পারব না।
–প্লিজ শর্মি চল। অনেকদিন তোর সাথে কোথাও যাইনি। তোকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ।
–রোজই তো ভিডিও কল করিস।
–একটা চুমু দেবো শুধু।
–অসভ্য! 
–নেক্সট প্ল্যান পরে জানাচ্ছি এখন অফিস বেরোতে হবে, বাই।
অনিরুদ্ধর উটকো আবদারগুলো মাঝে মাঝে প্রশ্রয় দিতে ইচ্ছে করে। 

শর্মিষ্ঠা কলকাতা নিবাসী হলেও কর্মসূত্রে চার বছর যাবৎ কোচবিহার আছে। এখানে ল্যান্ড রিফর্মস এন্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসে তার কাজ। অনিরুদ্ধ দিল্লিতে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে আছে। দু'বাড়ির সম্মতিতে আগামী জানুয়ারিতে তাদের বিয়ে ফিক্স হয়েছে।
শর্মিষ্ঠা তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নেয় একটি রুকস্যাকে। শনিবার  সকাল সকাল শিলিগুড়ি পৌঁছায়। অনিরুদ্ধর ফ্লাইট ঘন্টা খানেক আগেই এসেছে। একটা হোটেল বুক করে দুজন ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নেয়। হেলমেট, নি-গার্ড জুতো সব পরে ভাড়া বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। মোবাইলে গুগল ম্যাপ অন করা। সেবক ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে কি অপূর্ব লাগছে! ব্রিটিশদের তৈরি ব্রীজের নীচে  বয়ে চলেছে ভয়ংকর সুন্দরী ঘনসবুজ তিস্তা। এতটা ওপর থেকে তাকাতে বুকের ভেতরটা কেঁপে ওঠে। বিশাল বিশাল পাহাড়  অসম্ভব নিস্তব্ধতায় জায়গাটাকে ভীষণ রকম রহস্যময় করে তুলেছে। চারদিক তাকিয়ে সৃষ্টিকর্তার পারদর্শীতাকে সালাম জানায় মনে মনে। লাল চা আর ভেজ মোমো খেয়ে অনিরুদ্ধ আবার বাইক স্টার্ট করে। পাহাড়ি রাস্তার পদে পদে বাঁক কাটিয়ে পৌঁছে যায় গরুবাথান ব্লকের অন্তর্গত পাহাড়ি গ্রাম সৌরিনী। গ্রামে পৌঁছানোর রাস্তা প্রায় নেই বললেই চলে। পাহাড়ী পাথর বিছানো সরু পথ। সামান্য অসতর্ক হবার সুযোগ নেই। একপাশে গভীর খাদ। খুব দক্ষতার সঙ্গে অনিরুদ্ধ  বাইক এগিয়ে নিয়ে চলেছে। শর্মিষ্ঠা বলে
–এ কোথায় এলাম! 
 –আমরা এক প্ৰত্যন্ত গ্রামে চলে এসেছি। এখানে ওয়াইফাই পাবি না । 

 সন্ধ্যা প্রায় নেমে এসেছে। ওরা নিউ হরাইজন নামক একটি হোম স্টের সামনে দাঁড়ায়। আগে থেকে নেটে সার্চ করে হোমস্টে বুক করা ছিল। মালিক বিজয়সুন্দর মিত্র হাসিমুখে তাদের ভেতরে আসতে বলেন। এন্ট্রি পর্ব মিটে যাবার পর তিনি বলেন,
–আপনারা ফ্রেস হয়ে আসুন। চা রেডি আছে।
ওনার গলার আওয়াজটা কেমন ভারী এবং অস্বাভাবিক লাগছে। কথার মাঝে মাঝে একটু খুশখুশে কাশিও আছে।
বাথরুমে জল বেশ ঠান্ডা। কাল সকালের আগে গিজারে গরম জল পাওয়া যাবে না, উনি আগেই বলেছেন। তাই স্নানের ইচ্ছা থাকলেও শর্মিষ্ঠা হাত পা চোখ মুখ ধুয়ে ঢিলেঢালা পোশাক পরে। বিছানায় রাখা জ্যাকেট তুলে নেয়। পেছন থেকে অনিরুদ্ধ ওকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ এনে আলতো ভাবে জিজ্ঞেস করে 
–সবকিছু ঠিকঠাক? 
–বাথরুমে কত পোকা গিয়ে দেখ।
–সুন্দরীর গন্ধে ওরা এসেছে।
–তাড়াতাড়ি চেঞ্জ কর খিদে পেয়েছে।
ডাইনিং হলটা যথেষ্ট পরিষ্কার এবং সুন্দর করে সাজানো। সালোয়ার কামিজ পরা খুব সাদামাটা চেহারার একজন মহিলা এবং একজন কম বয়সী ছেলে, নাম সঞ্জয় ওদের চা চিকেন পকোড়া তারপর নুডলস দিয়ে গেল। কথায় কথায় জানা গেল সঞ্জয় শিলংয়ের বাঙালি। গেস্টদের বাসন ধোয়া ঘর পরিষ্কার রান্নার সমস্ত কাজ এরাই করে। রান্নায় অবশ্য বিজয়সুন্দর নিজেও সাহায্য করেন।

গেস্ট হাউসের রুমের সামনে উঠোনের মতো বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা রেলিং দিয়ে ঘেরা। ধার ঘেঁষে নানা রঙের ছোট ছোট পাহাড়ের ফুল ফুটে আছে। সামনে খাদ। এখন অন্ধকার ঘন হয়ে এসেছে। গাড়ির আলোয় উল্টোদিকের পাহাড়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা দেখা যাচ্ছে। রাতের পাহাড় ঝলমলে হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। উঠোনের  মতো এই জায়গায় টেবিল পাতা রয়েছে। আজ আর অন্য কোন গেস্ট নেই।ডাইনিং থেকে উঠে ওরা এখানে এসে বসল।
বাইরে এখন বেশ ঠান্ডা বাতাস। বিজয়সুন্দর আগে থেকেই একটা চেয়ারে বসে আছেন। ওদের দেখে বললেন
–বসুন। ভালো সময় এসেছেন। আজ পূর্ণিমা। কাল আপনাদের চেক আউট তো? 
শর্মিষ্ঠা বসতে বসতে উত্তর দেয়
–হ্যাঁ। পুরো দিনটা ঘুরে লাঞ্চ করে বেরোবো। এরই মধ্যে অনিরুদ্ধ রেলিংয়ের দিকে এগিয়ে ঝুঁকে পড়ে বেশ কয়েকখানা ছবি তুলে নেয়। বিজয়সুন্দরের মুখোমুখি একটা চেয়ার টেনে বসে। কাশতে কাশতে বিজয়সুন্দর জিজ্ঞেস করলেন
–আপনারা ড্রিংকস নেবেন তো?
 বিজয়সুন্দর সঞ্জয়কে হাঁক দিলেন। অনিরুদ্ধ চিবাস রিগ্যাল অর্ডার করে।
নিজেদেরটা রেডি করতে করতে জিজ্ঞেস করে  –আপনি?
 –আপনারা এনজয় করুন। আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।
আবার হালকা কাশলেন।
– কাল আপনারা হর্নবিল ফলস্ দেখে আসুন ভালো লাগবে। এছাড়া নেওড়া ওয়াইল্ড লাইফ অফিসও যেতে পারেন।
শর্মীষ্ঠা জিজ্ঞেস করে
–আপনি এখানে ক'দ্দিন আছেন?
–প্রায় একযুগ। মালবাজারে আমার চা বাগান আছে। তোদেতেও একটা রিসর্টের কনস্ট্রাকশন চলছে। এখানকার গ্রামের  নিস্তব্ধতা আমাকে ভীষণভাবে আকর্ষণ করে। প্রায়ই চলে আসি। কত সাহিত্যিক আমার এখানে এসে দিনের পর দিন থেকে তাঁদের অসামান্য সৃষ্টির দলিল করেছেন।  মোটামুটি  দু'শজন লোকের বাস। এরা সবাই নেপালি। খুব শান্ত প্রকৃতির মানুষ এঁরা। কৃষিই মূল জীবিকা, তবে প্রত্যেক পরিবার দেশের কাজ করেন।
–মানে!
–প্রত্যেক বাড়ি থেকে একজন  আর্মিতে জয়েন করেছেন।
কথা বলতে বলতে উনি যেন একটু হাঁপিয়ে উঠছেন। কাশতে কাশতে বললেন
–আপনারা নিউলি ম্যারেড?
অনিরুদ্ধ মৃদু হেসে বলে
–নট ইয়েট। উই স্যাল বি প্রসিডিং নেক্সট ইয়ার এবাউট দ্যাট।
–বাহ কংগ্রাচুলেশন।
এবার বেশ ভালো রকম কাশি শুনে সেই মহিলা বেরিয়ে আসেন।
 –বাইরে বেশ ঠান্ডা ঘরে চল।
কথার টোন শুনে শর্মিষ্ঠা বলেই ফেলে –এক্সকিউজ মি, আপনি ...?
বিজয়সুন্দর কিছু বলার আগই উনি বললেন
–আমি ওঁর ওয়াইফ যুথিকা। গেস্ট থাকলে আমরা চলে আসি। দেখুন না দু'দিন ধরে জ্বর। অন্য গেস্ট নেই, তবু আপনারা আসছেন শুনে চলে এল।
ভদ্রমহিলা হাসিমুখে গড়গড় করে বলে চললেন। যেন কত দিনের চেনা।
–চল ঘরে চল। আপনারা এনজয় করুন। সাড়ে আটটা থেকে নটার মধ্যে ডাইনিং-এ দেখা হবে।
ওরা চলে যাবার পর শর্মিষ্ঠা অনিরুদ্ধকে বলে –ভদ্রলোক কী কিপটে! কত টাকার মালিক হয়ে বউকে দিয়ে হোম স্টের সমস্ত কাজ করায়!
 অনিরুদ্ধ হাসতে হাসতে বলে
–পুরুষের অধিকার।
–চুপ কর। পারসেন্টেজ খুব কম। কী  সুন্দর চাঁদ উঠেছে দেখ! ইচ্ছে করছে আজ সারারাত তোর সাথে এখানে বসে কাটিয়ে দিই।
–আমার সারাদিন প্রচুর ধকল গেছে। এখন ঘুম পাচ্ছে ।
–একটু আদর কর না
–রুমে চল।
 –না, এখানে।
–পাগলী!
প্রত্যাশিত গভীরতায় দুজনের ঠোঁট ছুঁয়ে যায়। তারপরের কয়েক মুহূর্ত যেন আদিম উষ্ণতায় পৃথিবীর সুপ্রাচীন হিমশৈল গলে ঝাঁপিয়ে পড়ছে ভয়ঙ্কর পাহাড়ি ঝর্ণার মতো।

ভোরবেলা জানলা দিয়ে রুমে আলো ঢুকছে। গতরাতে সামান্য বৃষ্টির পর উত্তর আকাশের সাদা মেঘ উড়ে যাচ্ছে কে জানে কোন ঠিকানায়! শর্মিষ্ঠা  তাকিয়ে আছে দূরে, আনমনে। নিঃশব্দ আনন্দ মুহূর্ত সঙ্গে নিয়ে আজ ওদের ফিরতে হবে যার যার গন্তব্যে। অনিরুদ্ধ কখন যেন পাশে দাঁড়িয়ে বলে
–একটা গান শোনাবি?
 শর্মিষ্ঠা গান ধরে
–"নুতন প্রাণ দাও সখা ...
বিষাদ সব কর দূর
নবীন আনন্দে..."

ব্রেকফাস্ট করে ওরা বেরিয়ে পড়ে সৌরিনী গ্রাম দেখতে। একই সময়ে সস্ত্রীক বিজয়সুন্দরও বাইক  নিয়ে বেরিয়ে যান। সঞ্জয়কে বলা আছে দুপুরে ও লাঞ্চ দেবে।

 
ওপর মহলের জরুরী তলব, শর্মিষ্ঠা আজ একটু সকাল সকাল অফিস পৌঁছে গেছে । অনিরুদ্ধ ফোনে 
–তোর শরীর ঠিক আছে তো?
–নারে, গতকাল রাত থেকে একটু জ্বর জ্বর লাগছে।
–কি বলছিস! এক্ষুনি ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা কর। তোর জন্য খুব ভয় করছে রে। একটা লিংক পাঠালাম দেখিস।
লিংক খুলে শর্মিষ্ঠা দেখে একটি  নিউজ পোর্টালে বিজয়সুন্দরের পারিবারিক ছবি সহ লেখা ―অজানা জ্বরে আক্রান্ত উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু পাহাড়ি অঞ্চল। মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে ক্রমশ। সমস্যা মোকাবিলায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা এখনও রোগের ভাইরাস শনাক্ত করতে পারেননি।
উত্তরবঙ্গের চা বাগান মালিক বিজয়সুন্দর মিত্র গতকাল এই অজানা জ্বরে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র চুয়ান্ন বছর। স্ত্রী রিমি মিত্র এবং এক পুত্র ও এক কন্যা অত্যন্ত শোকাহত।
শর্মিষ্ঠা খুব অবাক হয়। ছবিতে বিজয়সুন্দরের পাশে এরা! আধুনিক পোশাক পরা অন্য একজন মহিলাকে এখানে স্ত্রী বলা হয়েছে। ছবিতে ছেলে মেয়েরা! তাহলে যুথিকা!
তার মানে ওই সময় বিজয়সুন্দর অল রেডি ইনফেক্টেড! 
এত কাছে বসে ওনার সাথে কতটা সময় কথা বললাম, তবে কি আমারও...!  উফফ আর ভাবতে পারছিনা।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                            software development company in siliguri,no 1 software
                            development company in siliguri,website designing company
                            in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                            in Siliguri website design company in Siliguri, web
                            development company in Siliguri