সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

সাগর কিনারে আশিস কুমার খাজাঞ্চি

সাগর কিনারে
আশিস কুমার খাজাঞ্চি
==================

আট দাঁড়াল পাঁচে। শ্বশুরমশাই বললেন, চলো এই পাঁচ জনেই যাব। শাশুড়িমা আরও এক কদম এগিয়ে দিলেন।
৬ই অক্টোবর, ২০১৪। শ্বশুরমশাই, শাশুড়িমা, আমাদের তাতা, ওর মা আর আমি মাদুরাই-এর উদ্দেশ্যে পা বাড়াই। তামিলনাড়ুতে আমাদের প্রত্যেকটি ভ্রমণের জায়গায় 'হোটেল তামিলনাড়ু'-তে বুকিং ছিল।
মাদুরাই-এ আমরা সফর শুরু করি মীনাক্ষী মন্দির দিয়ে। নিখুঁত কারুকার্যময় মীনাক্ষী দেবীর মন্দির মাদুরাইয়ের মূল আকর্ষণ। দৃষ্টি হারিয়ে যায় যার প্রত্যেকটি বালুকণায়, শৈল্পিক আঁচড়ে। শহরের আলাগড় মন্দিরে আমাদের এক মিষ্টি স্মৃতি জুড়ে আছে। গাড়ি থেকে নেমে মন্দিরের গেটের পাশে সবে দাঁড়িয়েছি। তাতা গাড়ির জানালার পাশে বসে আঙ্কেল চিপসের প্যাকেটটা একটু ছিঁড়েছে। বিদ্যুৎ গতিতে ওর হাত থেকে প্যাকেটটা ছিনিয়ে নিয়ে গাছের ডালে উঠে পড়ল এক বাঁদর। তাতা যখন ছোট ছিল। ও রীতিমতো ওকে ধমকে দিল। আমরাও ভ্যাবাচ্যাকা। বাঁদর বাহিনীর বাড়াবাড়ি উৎপাত ওখানে।
পরদিন শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে বহমান ভাইগাই নদীর পাশ কাটিয়ে সুদৃশ্য তালবীথি চিরে ছুটে চলা পথে চললাম দ্বীপভূমি ডক্টর এ পি জে আবদুল কালামের জন্মমাটি রামেশ্বরম। সড়ক পথ ইন্দিরা গান্ধী সেতু আর রেল পথ পম্বন সেতু মূল ভূখণ্ডের সাথে সাগর ঘেরা রামেশ্বরমকে জুড়েছে। জলের উপরে ঠিক যেন ভেসে আছে ভারতের প্রথম এবং ২০১০ সালের আগে পর্যন্ত প্রথম দীর্ঘতম রেলব্রীজ পম্বন সেতু। রেলগাড়ি সেতু পেরিয়ে যাওয়ার পর সেতুটি দুদিকে ভাগ হয়ে যায়। আবার জলযান চলাচল শুরু হয়। পম্বন সেতুর উপরে চলা রেল গাড়ি ডক্টর কালামের বর্ণময় কিশোর বেলায় আরো একবার নিয়ে গেল--রেলগাড়ি থেকে খবরের কাগজ ছুঁড়ে কোন কোন বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছেন ছোট্ট কালাম। রামেশ্বরম মানেই তো "দি উইংস অফ ফায়ার"-- জেলেগ্রাম, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম এশিয়ার দীর্ঘতম অলিন্দ বিশিষ্ট রামনাথস্বামী মন্দির, ডক্টর কালামের স্মৃতির পাতা। গন্ধমাদন পর্বত, অগ্নিতীর্থম সৈকত, লক্ষণ মন্দির, হনুমান মন্দির।
ছিলাম 'হোটেল তামিলনাড়ু'তে। দিগন্ত বিস্তৃত বাঙ্গোপসাগরের লক্ষ ঢেউ সারা দিন সশব্দে লুটিয়ে পড়ে যার প্রাচীরে। হোটেলের দাওয়ায় বসে সমুদ্রের ফেনিল ঢেউ গুনে কাটে সময়। পাল তোলা নৌকারা রঙিন হাতছানি দিয়ে কত কি বলে যায়। রাত পোহাতেই অগ্নিতীর্থম সৈকতে সানরাইজ পয়েন্টে সাক্ষী হলাম সাগরের অতল জলরাশি ফুঁড়ে উঠে আসা রবির উদয়ে। কি অরূপ তার শোভা! ছবি নিতে নিতে হোটেলের দিকে ফিরছিলাম। ছেলে ও আমাদের বাকি সদস্যদের সাথে মাঝ পথে দেখা হল। ওরা হোটেল থেকেই আসছিল। বীচের কংক্রিটের পাড় ধরে চলতে চলতে হঠাৎ তাতা বলল, "বাবা, একটা মোবাইল পড়ে আছে।" তুলে দেখলাম সেটা আমারই। ছবি তোলার সময় কখন ওটি আমায় ছেড়েছে আমি টের পাইনি। বহু মানুষের আনাগোনার মাঝে কাকতালীয়ভাবে ছেলের চোখেই পড়ল। নেহাৎ ভাঙা কংক্রিটের রাস্তায় এক ফাটলে 'ও' আধো আলোছায়াতে ছিল তাই। সে ছিল এক বিস্ময়! যাওয়ার আগে মোবাইলটা কিনেছিলাম। হোটেলে ফিরে লনে তাতা, মনি আর তাতার দিদা দোদুল দোলে দোলনায় দুলল। বেড়াতে বেরিয়ে মনি কখনও দোলনায় দোল খেতে ভোলে না, সে মুন্সিয়ারির নন্দাদেবীর মন্দির চত্বরেই হোক আর গাজলডোবার পার্ক। শ্বশুর মশাই ও শাশুড়ি মাও বেড়ানোর মজায় মাঝে মাঝে বাচ্চা হয়ে ওঠেন। রামেশ্বরমের শিব মন্দিরটি কেন খ্যাত মন্দিরে পূজা দেওয়ার পর বুঝলাম। এমন বিশাল অলিন্দে হাঁটার অভিজ্ঞতা আগে কখনো হয়নি।
কন্যাকুমারী যাওয়ার পথে ইন্দিরা গান্ধী সেতুর মুখে আমাদের বাহনটির শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। সুতরাং সুযোগটিকে পূর্ণ কাজে লাগাই। সেতুর উপর থেকে গোটা রামেশ্বরম যেন এক নারকেল বাগ। সাগরের তীর বরাবর জেলেগ্রাম, জেলেদের হরেক আকৃতির জাল, রকমারি জেলে-নৌকা, তাদের জাল টেনে তোলার ধরন, সমুদ্র-সবুজ জলে এদিক সেদিক ভাসমান রঙিন পালতোলা ছোট বড় নৌকা এক স্বপ্ন সুন্দর পট। সত্যি বলতে কি আমার চাওয়া পাওয়াকেও ছাপিয়ে গেছিল।
তিন ঘন্টা কেটে গেল গাড়ি ঠিক হলো না। আবার মাদুরাইয়ের এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করলাম। শেষে আরেকটি গাড়ির ব্যবস্থা ওরা করে দিল। ড্রাইভারটিও আলাদা।
কিছু সুন্দরের বর্ণনা বোধ হয় কালির আঁচড়ে আনা যায় না। রামেশ্বরম থেকে কন্যাকুমারী যাওয়ার রাস্তায় যেতে যেতে বারেক মনে হয় এ পথ যদি না শেষ হয়। কিন্তু রাস্তার দু'দিক জুড়ে কাঁটা -বাবলার ঝোপ ছাড়া অন্য কিছু চোখে পড়ে না। সেও এক শ্যামলসুন্দর রূপ। রুক্ষতার মাঝেও রূপের বাহার। বাঁ দিকের সবটাই বঙ্গোপসাগরের বেলাভূমি। কন্যাকুমারী পৌঁছানোর মাঝামাঝি বেশ কয়েক কিলোমিটার রাস্তার দু'পাশ বরাবর রাশি রাশি দুধসাদা লবণের পিরামিড। আমরা নেমেই পড়লাম গাড়ি থেকে। তাতা আর মনি প্লাস্টিকে নমুনা হিসেবে কিছু লবণ ভরে নিল। কানে শুনেছি, কিন্তু লবণ প্রস্তুতির এমন আসর এই প্রথম দেখলাম। আরও কয়েক মাইল দৌড়ানোর পর দেশের শেষ প্রান্তে ভারত মহাসাগরের তীরে এসে আমাদের গাড়ি থামল। নতুন ড্রাইভারের সাথে সম্পর্কটা ভাল গড়ে ওঠেনি। এজেন্সির সাথে কি কথা হয়েছিল জানিনা। ভাড়া নিয়ে সমস্যা এতটাই জটিল হয় এমনকি আমাদের মালপত্র গাড়িতে নিয়ে ও কেটে পড়ার হুমকি দেয় । হিন্দি বা ইংরেজি ভাষা বাদ রেখে ওর দুর্বোধ্য তামিল ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। শেষে ভাষার কাছে বশ মেনে ওর চাহিদা মেটাতে বাধ্য করল।
সমস্ত বাদানুবাদ, তিক্ততা আরব সাগরের জলে মিশে গেল, যখন স্বামীজীর ধ্যানমগ্ন অস্তিত্বে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল চোখে পড়ল। এদিকে কন্যাকুমারীতে পৌঁছতে সন্ধ্যাও হয়েছিল শুধুই গাড়ির কারণে। আমাদের হোটেল "হোটেল তামিলনাড়ু"র পরিবেশ সব দিক থেকে অসাধারণ। ময়ূর-ময়ূরী খেলে বেড়ায় সকাল-দুপুর- সাঁঝ। উঠোনে, গাছ থেকে গাছে। পা বাড়ালেই সাগরের তট। থরে থরে পসরা সাজিয়ে দোকানপাট। রাতের বাজার বড়ই মায়াময়। রাতের আঁধারে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়াল অপার শোভায় শোভমান। তামিল কবি থিরুভাল্লুভার মূর্তিটির অবস্থান স্বামীজীর স্মৃতিসৌধের পাশে বড়ই বেমনান বলে আমার মনে হয়েছে, কবির প্রতি সম্মান রেখেই। সকালে সাগরের আছড়ে পড়া ঢেউ মেখে দিনের প্রথম সূর্যের প্রভা মেখে নিলাম। কুয়াশাভাঙা ভোরের সূর্যোদয়ে অভিভূত আমরা এরপর স্বামীজীর স্মৃতিসৌধ স্পর্শ করতে লঞ্চে চেপে বসি। দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। ঢেউয়ের দোলায় দুলতে দুলতে লঞ্চ পৌঁছে দিল বহুকাঙ্খিত স্বামীজীর পদতলে, তাঁর ধ্যান মন্দিরে। ত্রিবেণী সঙ্গম-এর এই পূর্ণ ভূমিতে অগনিত মানুষের ভীড়। রক মেমোরিয়াল-এর মেডিটেশন রুমে দাঁড়িয়ে সেই মুহূর্তে শোনা ওম্ ধ্বনি শরীরের প্রত্যেক বিন্দুতে আমি সমানভাবে অনুভব করি আজও। গুরুগম্ভীর রহস্যময় সে ধ্বনি। অন্তহীন প্রশান্তি। ত্রিবেণী সঙ্গমে ভারতের মহা তাপসের উপলব্ধি ওম্ ওম্ ম্ ম্.......।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri