সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
28-November,2022 - Monday ✍️ By- নীলাঞ্জন মিস্ত্রী 176

রহস্যে মোরা পাঁচপোখরি/নীলাঞ্জন মিস্ত্রী

রহস্যে মোরা পাঁচপোখরি
নীলাঞ্জন মিস্ত্রী
------------------------------------

পাঁচ পুকুর। স্থানীয় ভাষায় পাঁচপোখরি। চারিদিকে দিগন্ত বিস্তৃত ছোট বড় পাহাড়ের সারি আবার কোথাও পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঢেউ খেলানো সবুজ গালিচার সাথে  তার সুদৃশ্য আলিঙ্গন। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত আকাশ-মেঘ আর পাহাড়ের ছায়ায় পোখরির জলে ছড়িয়ে পরে সাত রঙের মায়াবী প্রলেপ। এককথায় পাঁচপোখরির সৌন্দর্যটাই মনভোলানো। আয়নার মতো স্বচ্ছ জল তার। স্থানীয় পাখিদের দল কিন্তু বিন্দুমাত্র নোংরা হতে দেয় না এই স্বচ্ছ জলকে। আশপাশের গাছগুলি থেকে একটি শুকনো পাতাও যদি জলে এসে পরে সাথে সাথেই তা ঠোঁটে তুলে নেয় পুকুরের দায়িত্বে থাকা এই রঙবেরঙের ছোটো বড় সৈনিকেরা। দায়িত্ববোধে তারা এতটাই যত্নশীল। অনেকটা পশ্চিম সিকিমের ‘খেছুপেরি’ লেকের মতো। আর দিনের শেষে সুরজমামা যখন হাত নাড়াতে নাড়াতে  টুপ করে পড়ে যায় পাহাড়ের ওপাশে। অন্ধকার কিন্তু ঘনিয়ে আসে না এই পাঁচপোখরির বুকে। বরং উজ্জ্বল এক আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে তারা। এ আলো কোন আধুনিক প্রযুক্তির সৃষ্ট আলো নয়। তবে উৎসটা আজও অজানা। কথিত আছে ঈশ্বরপ্রদত্ত কোন আলোর আধার লুকিয়ে রাখা রয়েছে পাঁচ পুকুরের মাঝে। গুম্বা, সিবযে, মানা, থাম আশেপাশের এই গ্রামগুলি থেকেও দেখা যায় রাতের এই উজ্জ্বল আলোর উপস্থিতি। লোকমুখে আরও শোনা যায় সর্বাপেক্ষা বড় পোখরিটির চারধারে ক্রমাগত ঘুরে বেরায় বৃহৎ এক সুদৃশ্য শঙ্খ। এ দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য কিন্তু সকলের হয় না। দশ জন দল বেঁধে গেলে শুধুমাত্র একজনেরই তা দেখার সৌভাগ্য হয়। এ এক বড় অদ্ভুত ব্যাপার। পাঁচপোখরির রহস্যের শেষ কিন্তু এখানেই নয়। যে পাখির দল পরম যত্নে আগলে রেখেছে এই  পাঁচপোখরিকে তারা থাকে পাশের একটি বড় গাছে। এই গাছে নাকি কেউ কোনদিন উঠতে পারেনি। আর সে দুঃসাহসও কারো নেই। ওঠার চেষ্টা করলেই সামনাসামনি পড়তে হবে বিষধর সব ভয়ঙ্কর সাপের। কোন একজন অসীম সাহসী নাকি খানিকটা উঠেই পড়েছিল সেই গাছে। কিন্তু অনতিবিলম্বেই সাপের দংশনে মারা যায় সে। এ ঘটনা যিনি চাক্ষুষ করেছেন তিনি আজও জীবিত। তাই গল্প নয় এ এক সত্য রূপকথা।

‘ঘ্যালেটারের’ সুদৃশ্য ‘আবেশ হোমস্টের’ বারান্দায় বসে এক কাপ ব্ল্যাক টি-র সাথে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ রূপ দেখতে দেখতে শুনছিলাম এসব। এখন পাঁচপোখরি থেকে খানিকটা নীচে আমরা। আগামীকাল কিছুটা পথ বাইকে যাবার পর ট্রেক করে ওপরে উঠে পৌঁছতে হবে রহস্যে আবৃত পাঁচপোখরিতে। উত্তেজনার পারদ তাই মনকে সান্তনা দিয়ে বলছে, আর তো মাত্র কয়েক ঘণ্টা বন্ধু।

কত সাদা পথ, কালো পথ ধুপিবনের মাঝে। সে পথ ধরে হেঁটে যেতে চায় আবেগি মন। সাদা মনের কালো পথ আর কালো মনের সাদা পথ; যে পথই ধরিনা কেন; পৌঁছবে  সৃষ্টিকর্তার নিকটই। নীচের পাহাড়ি পথেরা রোদ্দুর মেখে উষ্ণ হতে শুরু করেছে। পথ ঘেষা বুনো ফুলেরা কাঞ্চনের দেখা পেয়ে হাসিতে খিল খিল। পথের দু'পাশেও ফুটে রয়েছে নাম না জানা অনেক ফুল। মিঠেল হাওয়ায় মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে কত কথা বলার চেষ্টা করছে ওরা। বারান্দার রেলিং-এর উপর সারি সারি ফুলের টব। বড় আদরের সেইসব দুষ্টু-মিষ্টিরা করুন দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে পথের দিকে। একতরফা ভালোবাসার শেকল ভেঙে ওরাও আজ বুনো হতে চায়। বাঁচতে চায় অযত্নে সাম্রাজ্য বিস্তার করা শেকলহীন ফুলগুলির মতোই।

রান্নাঘর থেকে ডাক এল - ব্রেকফাষ্ট রেডি। আলুর দোম আর ফুলকো লুচি ঝটাপট পেটে পুরে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। পাহাড়ি পথ বেয়ে ঘ্যালেটার থেকে কিলোমিটার সাতেক পেছনে এসে বাইকের ইঞ্জিনে বিরতি। রাস্তার ধারেই বাইক রেখে পদব্রজেই উপরে উঠে যাওয়া। সবুজ গালিচার মাঝে চড়াই উতরাই আর জিগজ্যাগ পেড়িয়ে অবশেষে আমরা রূপকথার সাম্রাজ্যে। স্বর্গরাজ্যে পৌঁছে শরীরে হালকা শিহরন, নির্লিপ্ত চোখ আর অল্পটুকু হতাশা। সব পাতা ঝরিয়ে রূপকথার সেই সুবিশাল গাছটি দাঁড়িয়ে রয়েছে আমাদের সামনেই। রঙবেরঙের ক্ষুদে সৈনিকের দেখা নেই আশেপাশে। শীতকালীন ছুটিতে চলে গেছে তারা। পোখরি জলে ভরলে আবার ফিরে আসবে দলবেঁধে। এ দায়িত্ব যে গুরু দায়িত্ব।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri