সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon

রঙিন চড়ুইভাতি/আশিস কুমার খাজাঞ্চি

রঙিন চড়ুইভাতি
আশিস কুমার খাজাঞ্চি

       চিকরাশির "সহজউঠোন"- এর প্রতি আমার অসীম কৃতজ্ঞতা। কোনো চড়ুইভাতির স্বাদ  সর্বাংশে এমন স্বাদু হতে পারে সে কেবল দারাগাঁও, পাপড়খেতিতে প্রায়-তিন দিনের "সাহিত্যের চড়ুইভাতি"তে উপস্থিত জনেরা নিয়েছেন। তিনটি দিন নাচে -গানে-গল্পে-কবিতায়-আড্ডায়-রসিকতায় এবং কথামালায় অনাবিল এক ভালোবাসার আবহে আচ্ছন্ন থাকল "সাহিত্যের চড়ুইভাতি"। এক পরম পাওয়া দেহে মনে ছুঁয়ে রইল। এমন গুণীজন-সম্মৃদ্ধ শোভন চড়ুইভাতি আমার কাছে স্বপ্নে দেখা। 

পাপড়খেতির অভিনয় হোমস্টের মাটি ছুঁতেই দূরের এক অজানা পাহাড়ের কোনো এক গুম্ফা থেকে একটানা ভেসে আসা প্রার্থনা সংগীত সব ভালোর বার্তা পাঠিয়ে প্রতিবেশী পাহাড়ের সাহিত্যের চড়ুইভাতির অতিথিদলকে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। তখনই জেনেছিলাম সবটা ভালো হবের ঠিকানাতেই এসেছি।

     প্রথমেই আমাদের চিকরাশি এবং সহজ উঠোনের সম্পাদক কবি ও সহিত্যিক অমিত কুমার দে মহাশয়কে ধন্যবাদ ও কৃজ্ঞতা জানাব তাঁর এই অনন্য সুন্দর প্রয়াস আর তার সার্থক রূপ দিতে বদ্ধপরিকর মানসিকতার জন্য। বরফ শীতল ধৈর্য যাঁর বিলাস, ভালোবাসা কণ্ঠে যাঁর বেঁধেছে ঘর, সাফল্য যে সেই মানুষটিকে সাথ দেবে তাতে কোনও সন্দেহ থাকতে পারে না। ধন্যবাদ সেই সমস্ত সভ্যবৃন্দকে যাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণে "সাহিত্যের চড়ুইভাতি" পরিপূর্ণতা পেল।

      বয়স যে একটা সংখ্যামাত্র সে আমাদের প্রশান্তদা, পার্থদা, মীনাক্ষীদি, বেলাদি, চম্পাদিরা একাধিকবার প্রমাণ রাখলেন। চম্পাদি কন্যা সৌমিতার খালি গলায় গানের তালে তালে মীনাক্ষীদি চম্পাদিও মুক্তিদিকে নিয়ে যেভাবে দক্ষ নাচে মেতে উঠলেন তাতে তিন দিদিভাইয়ের জন্য কোনও বিশেষণই যথেষ্ট নয়। আমাদের উদ্যোক্তার স্বয়ং গানে গানে চেয়ার বাজিয়ে তবলচির অভাব পূরণ, সাথে বাকি দর্শকদের করতালিতে মনজুড়ানো সঙ্গত গানের শ্রুতি-মাধুর্য হাজার গুণ বাড়িয়ে তোলে। উপভোগ করলাম।

       মীনাক্ষীদিকে যতক্ষণ দেখেছি বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি। ওঁর থেকে শেখা যায় জীবনে বাঁচতে হলে পাহাড়ি নদী হয়ে বইতে হবে,  আকাশ ছুঁই ছুঁই পাহাড়ি ঝাউ, পাইনবৃক্ষদের মতো মাথা উঁচু  রেখে দাঁড়াতে হবে। রিল বানাতে লাজুক-নরম পার্থদাকে নিয়ে পার্থদার গাওয়া গানে দিদি যেভাবে নাচলেন আর পার্থদাকে নাচালেন তাতে চোখ দাঁড়িয়ে যায়, ধাঁধিয়ে যায়। শ্রীমতী মীনাক্ষী ঘোষ নির্দ্বিধায় নিজেই এক মজার সংগ্রহশালা। দিদির দরাজ কন্ঠের আবৃত্তিতে আমি এখনও  রয়ে গেছি "অভিনয় হোমস্টে"র সামনের উঠোনে। 

       হাসি হাসি পার্থদা যেন গাইতেই এসেছেন জগৎ জলসায়। যে কোন অবস্থায় গান গাওয়াতে যাঁর ব্যাকরণে ন্যূনতম আলসেমীর আস্তানা নেই। সে হিন্দি হোক আর বাংলা। হাসতে হাসতে গাওয়া আর গাইতে গাইতে হাসা। কম মানুষ এই ক্ষমতা রাখেন। 

     পার্থদাকে সদাব্যস্ত রাখতে যে মানুষটি সদাউন্মুখ সেই প্রশান্তদা যে সত্তর পেরিয়ে ছিয়াত্তরে পা রেখেছেন তাঁকে দেখে অনুমান করা কোনও জ্যোতিষীরও সাধ্যের বাইরে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলের সাথে নিমেষে মিশে যেতে ওঁর সময় ধার নিতে হয় না। ডুয়ার্সের প্রাণ তিস্তা নদীর প্রতিদিন তিলে তিলে মরে যাওয়া ওঁকে পলে পলে কাঁদায়, ভাসায়। তিস্তা সম্পর্কে প্রশান্তদার তিস্তা প্রমাণ অভিজ্ঞতা হোমস্টের ডাইনিং টেবিলে দ্বিতীয় দিনের সন্ধ্যায় সবার মধ্যে বাঁটলেন। সুব্রত ( বাড়ই)-এর তিস্তা-তৃষ্ণা মেটাতে সাধ্য মতো তিস্তা বৃত্তান্ত সাগ্রহে বুনে গেলেন। তিস্তাকে বিশদে জানলাম। তিস্তার আশু দুর্দিন আর তার সাথে জড়িয়ে অগণিত মানুষের অস্তিত্ব-সংকটের এক সাংকেতিক ছায়াছবি পরিষ্কার দেখতে পেলাম।

      চিত্রাদি, বেলাদির একের পর এক স্বরচিত গল্প পাঠ শুনতে শুনতে  হারিয়ে যাচ্ছিলাম কাহিনীর নিজ ময়দানে। আর মুক্তিদির আবৃত্তির ধুন তো সাহিত্যের চড়ুইভাতির অলঙ্কার হয়ে রইল। আমাদের রণজিৎদা আর অতনুদা আমার কাছে প্রশান্ত অথচ প্রাণবন্ত পাহাড়িয়া আবেগ। চড়ুইভাতির গোটা পর্বে অনুপমদা, মালবিকা, শুক্লা আর তিন মূর্তি -- বিকাশ, কৃষ্ণ আর তাদের ছায়াসাথী সুব্রতর নীরব শ্রম দান অদৃশ্য কালিতে লেখা হয়ে গেল। তবে বিকাশ ছাড়া কৃষ্ণ নয়, কৃষ্ণ ছাড়া বিকাশ নয়! আমরা "অভিনয় হোমস্টে"র ১০৭ নম্বর রুমের ৪ঠা ও ৫ই নভেম্বরের বাসিন্দারা ওদের অক্লান্ত রসিকতা দর্শকের ভূমিকায় তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছি। পাপড়খেতির সানরাইজ পয়েন্টে প্রতিটি সকাল আমাদের উজাড় করে দিয়েছে। সেরার সেরা রণজিৎদা-পার্থদা-অমিতদার সমবেত কণ্ঠের কুয়াশা ভেজা ভোরে রবীন্দ্র সংগীত --- "আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে" .......।

      দুই কন্যার স্বরচিত কবিতা পাঠের সাক্ষী রইল পাপড়খেতির আকাশ বাতাস অন্দরমহল। কবিতা নয় বরং চিরন্তন শিশিরধোয়া স্নেহসেতু বলি। চড়ুইভাতির আড্ডায় দূর আকাশের কাছে গচ্ছিত রাখা বাবাকে পলকে হারানোর যন্ত্রণার আপন শব্দছবি সুদীপার কবিতামলাটে গাঁথা। দারাগাঁও-এর অপরাহ্ণের খামে ভরা কবিতার পংক্তি ভরে বাবার বড় আদরের মেয়েটি আকুল স্বরে চাইছে বাবা আর একটি বার ফিরে আসুন। অন্যদিকে মিস্টার এবং মিসেস চন্দের কন্যা মোহর বাবার সেই "ছোট্ট বুড়ি" ডাইনিং হলে সান্ধ্য আড্ডায় ২০০৫-এ বাবাকে লেখা একটি কবিতায় নিজের ছেলেবেলায় বাবার হাত ধরে আবার হাঁটলো। বাবা-মা ওর পাশে বসে মগ্ন শ্রোতা। পেলাম শ্রীমতি শাশ্বতী চন্দের গল্প সম্ভারের কিঞ্চিৎ আভাস , শুনলাম শুক্লা, মালবিকা ও কৃষ্ণ চন্দ্রের বলিষ্ঠ কন্ঠে আবৃত্তি, মনিকুন্তলার কণ্ঠে সংগীত, অতনুদার কর্ম ক্ষেত্রে আগুন নেভানোর হরেক কথাকাহিনী । স্বেচ্ছায় প্রাণ দিতে যাওয়া কোনো এক কিশোরীকে অতনুদার অভিনয়জালে বাঁচানোর গল্পে হাসিতে ফেটে পড়ে সন্ধ্যার ডাইনিং হল। দ্বিতীয় দিনে নীপাদি আর সৌমিতার খালি গলায় অবিশ্বাস্য সুরে গাওয়া গানে সবটাই পুষিয়ে গেল। দু'জনের গলাতেই যেনো সাতসুর। আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ দুই আবৃত্তিকার সপ্তম শ্রেণীর শাশ্বত আর তার বোন শুভমিতার কাছে সম্পূর্ণ অন্য ধারার  আবৃত্তি শোনার সৌভাগ্য হল। শাশ্বতর অভিনয় যোগে আবৃত্তি আর নেপথ্য কণ্ঠে ওর মায়ের ভূমিকা ভোলার নয়। 

       পপি বৌদির কথায় এবার না এলে পরের বারে আমি আর খবরটিও পাব না। "হাত পা বাঁধার" গান শুনতে পাব না। ১০৭ নম্বর রুমের রুমমেটদের ১০ জনের একজন হিসেবে বৌদির জমাটি আসর থেকে যা নিলাম তা হাতছাড়া হবে। বৌদি তোমাদের শ্রুতি নাটকটি কিন্তু বাকি রয়ে গেল। আর অমিতদার গান, কবিতা পাঠ, নতুন নতুন কথাকলি, সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা এ তো আমাদের সম্পদ। 

       আমি ঋদ্ধ। রামধনুর সব রঙে রাঙা এমন  সংসারে বারে বারে উপস্থিত থাকার আশায় "সাহিত্যের চড়ুইভাতি"র স্মৃতি রোমন্থনে লম্বা দাঁড়ি টেনে দিলাম! 

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri