বর্ণময় দারাগাঁও ভেসেছিল কবিতা গদ্য আড্ডায়/প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
বর্ণময় দারাগাঁও ভেসেছিল কবিতা গদ্য আড্ডায়
প্রশান্ত নাথ চৌধুরী
একদিন অনুজ অমিত (অমিত কুমার দে) বলেছিল - "দাদা নভেম্বরে একটা সহজ উঠোনের চড়ুইভাতি হলে কেমন হয়? আর কোথায় হবে সেটাও যদি বলেন।" আমি বলেছিলাম ' ইষ্টিকুটুম'-এ আবার হোক না। সুব্রতর অমন আতিথেয়তা, কম্প্যাক্ট থাকার ব্যবস্থা, খাওয়া, লন, দোলনা, আগুন তাপানো, বাগান থেকে বেগুন তুলে ভর্তা, বাসরা নদী, ওপারে কুয়াশায় মোড়া বক্সা টাইগার রিজার্ভ, দলবেঁধে দুলুং নদীর পারে, আর নদীর পাশে করুণ সুন্দর টং ঘর।
আমদের রাত একটায় অভিসার যাত্রায় ডিমা নদীর ব্রীজ থেকে শোনা চখার আর্ত ডাক, ভুলি কি করে? মনে হয় একবার সুব্রতর হাত ধরে বলি "তোমায় আমরা ভুলিনি।"
আমি অমিতকে বলেছিলাম "যেখানেই যাও আমি আছি।" বারবার পাশার দান উল্টেপাল্টে অবশেষে অমিতের ঘোষণা- "এটাই ফাইনাল! ব্যাগ গুছিয়ে ফেলুন, ওষুধ নিয়ে নিন আর রঙিন জল নৈব নৈব চ।"
আমার দুই বান্ধবী চিত্রাদি ও বেলিদির হাঁটুর সমস্যা। ওরা সময়ে রেডি। কিন্তু পার্থ দেরীতে এলো। আমরা একটা নাগাদ দারাগাঁও 'অভিনয় হোম স্টে'তে পৌঁছলাম । রঞ্জিত এসেছে, অমিত, পপি, শুক্লা চলে এসছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই লন জমজমাট মেলা বসে গেল। অতনু, মুক্তিদি ও কন্যা মোহর আমাদের মনোজগতের বাসিন্দা। এমন জিনিয়াস পরিবার খুব কম দেখেছি। অকাল বসন্ত নিয়ে বিউটিদি। নামটি আমার উপহার। শাশ্বতী চন্দের লেখা আমার ভাল লাগে। বারান্দায় শাশ্বতীর ছবি তুলে রেখেছি।
লাচুং ছু-এর বেগে ধেয়ে এসেছিল অনুজা মীনাক্ষী । ও নিজে লক্ষ কিউমেক উচ্ছাসের আধার, নিমেষে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। লক্ষ্মীছাড়া কৃষ্ণ, সুব্রত ও বিকাশ একে অপরের পরিপূরক। ওরা সীমাহীন মজা করেছে। অনুপম অনেকটা সমমনস্ক আমার কাছেই থেকেছে ও এখনও পাশে আছে। ওর স্ত্রী মালবিকার সঙ্গে আমার বোধহয় কোনও কথাই হয়নি।
সুদীপা ও ওদের পুত্রকন্যা দুজনে ছিল মুক্ত আকাশে সোনালি ডানার চিল। প্রাণ খুলে বিচরন আবার মা বললেই কবিতায়। সুদীপার কর্তাটিকে চেনার সুযোগ পেলাম কোথায়।
একটি স্বভাব বাউল ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলেছে অসংখ্য। সে আশিস। দক্ষিন ২৪ পরগনা থেকে সাহিত্যের অঙ্গন। মণি- ওর স্ত্রী সুন্দর গান গেয়েছে। আশিস আমায় জিতে নিল পঞ্চাশ বছর আগে ভালবাসার সিগনেচার টিউন 'কেউ কথা রাখেনি.............' দিয়ে। গান কবিতা, নাচে সবার হৃদয় জয় করে নিয়েছিল পার্থ। প্রতিটি ছবির ফ্রেমে তার অবস্থান। আমি ওর অনুগত সাইকোফান। গান শুনলাম নীপা ম্যাডামের। রেওয়াজি গলা। কবিগুরুর গানের আবেশ ছড়িয়ে ছিল দিগন্তে। বিউটিদির কন্যা সত্যি অনন্যা। সঙ্গীতময় তার উপস্থিতি। মুক্তিদি যখন বনলতা সেন বলেন তখন সবাই আবেগে ভেসে চলে দারুচিনি দ্বীপে। অমিতের অনবদ্য কবিতার ইংরাজী অনুবাদ, মোহরের অনভ্যাসের গান মনে রেখেছি। রঞ্জিত পার্থ ও আমি একঘরে ছিলাম। কত প্রগলভ আড্ডা। রঞ্জিত ও আমি খাটে আর পার্থ কম্বল বিছিয়ে মেঝেয়। আমাদের হলে বিছানা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু একসাথে থাকব। জানি পার্থ মনে রাখেনি।
আমার ভাই বৃন্দা, ছোট পার্থ, মৈনাক, ক্যাপ্টেন, শালসিঁড়ি, সুকান্ত আরো দুজন তোমাদের কথা বারবার মনে পড়েছে।
পপি ও শুক্লার কথা পরে একদিন বলব। চলে আসার মূহুর্ত আমাকে বিহ্বল করেছিল। আমি যে নিজের প্রতি সর্বদা সুবিচার করেছি তা নয়। তাই বলি ' ....... মনে থাকব আমি ধূসর কুয়াশায় নয় শুধুমাত্র ভালবাসায়'।
(০৪.১১.২৩. থেকে ০৬.১১.২৩ সকাল পর্যন্ত পাপড়খেতির ওপরে দারাগাঁও- এ ২৪ জন একসাথে সাহিত্যের চড়ুইভাতি ।)
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴