সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
10-November,2023 - Friday ✍️ By- শুক্লা রায় 804

চিকরাশি সাহিত্যের চড়ুইভাতি/শুক্লা রায়

চিকরাশি সাহিত্যের চড়ুইভাতি
শুক্লা রায়

'চড়ুইভাতি' শুনলে মনটাও চড়ুইয়ের মতো ফুরুৎ ফুরুৎ হয়ে যায়। সংসারের দরজা-জানলা বন্ধ থাকলে ভেন্টিলেটর দিয়ে পালানোর পথ খোঁজে। আমার দশাও সেরকম। এক তারিখ রাতে মেয়ের প্রবল শরীর খারাপ। দুই তারিখ ছুটলাম শিলিগুড়ি। তিন তারিখ ওকে সঙ্গে নিয়ে ধূপগুড়ি ফিরলাম। অসুস্থ মেয়েকে রেখে চড়ুইভাতি? বিবেক নামক মন চোখ রাঙাচ্ছে। আবার অতি উৎসাহী লোভী মন বলছে, দে না, দে পাঠিয়ে ঠাকুমার কাছে। দুটো তো দিন! থাকুক কাকিমণির হেফাজতে। সুতরাং ঠিক হল আমি বেরিয়ে গেলে বাপ-বেটি বাড়ি চলে যাবে। 

সকাল আটটার সামান্য পরেই গাড়ি এসে বাড়ির সামনে দাঁড়াল। স্যার স্টিয়ারিঙে। উঠতে যাব, মালবিকার নিরীহ প্রশ্ন, জ্যাকেট নিয়েছ? মনে পড়ল, ক'দিন আগে আনন্দের আতিশয্যে টেক্সট করেছিলাম, জ্যাকেট ধুয়ে দিলাম, যাওয়ার জন্য। প্রবল গরমে যখনই একটু রোদটা পড়ে ছায়া ছায়া ভাব আসে সবাই মিলে মনে করায়, শুক্লা তোমার জ্যাকেট বের কর। ঠান্ডা পড়ে গেল। এরকম শত্রু পরিবেষ্টিত হয়ে অবশেষে অম্বিয়ক টী গার্ডেন ছুঁয়ে পাপরখেতি। হোম স্টে অব্দি যাওয়ার আগে এখানে সবাই মিলে রঞ্জিৎদার মোমো আর চা। আহা! কী অপূর্ব! খেয়ে একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিলাম। মেয়ের সঙ্গে থেকে আমারও জ্বর, কাশি। আবার রওনা। আমাদের ধারণা ছিল আমরাই সবার আগে ঢুকে যাব। কিন্তু আমাদের অবাক করে দিয়ে রণজিৎ কুমার মিত্র স্যার সবার আগে পৌঁছে গিয়েছেন। কৃষ্ণ, বিকাশ, সুব্রত সব ফ্লেক্সগুলো বিভিন্ন জায়গায় টানিয়ে দিল। গতবারের আনন্দের রেশ সবার ভেতর বিরাজমান। সেজন্যই হয়ত এবার সবাই একদম ঠিক সময়েই পৌঁছে গেলেন। চড়ুইভাতি মানেই চড়ুইভাতি। কোনো পোশাকী নিয়মের কড়াকড়ি নেই। যেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছি সেখানেই আড্ডা। গতবছরের পর আবার সব ইয়ং লেডি এবং জেন্টলমেনদের সান্নিধ্য পাওয়া। মাত্র দুটো দিন যেন এক পলকে কেটে যায়। প্রশান্ত নাথ চৌধুরী স্যার, বেলাদি ও চিত্রা পাল দিদি -এঁদের অংশগ্রহণ চড়ুইভাতিকে একটা অন্য মাত্রা এনে দেয়। এঁদের সঙ্গে ভালো মানুষ পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় দাদা। এক এক করে এলেন অতনু চন্দ দাদা, মুক্তি চন্দ দিদি ও মোহর - আমার প্রিয় মানুষেরা, বাচিক শিল্পী মীনাক্ষী ঘোষ। পুত্র কন্যাসহ সুদীপা। নিমেষে আপন হয়ে গেল যেন। চম্পা ভট্টাচার্যের সঙ্গে এলেন শাশ্বতী চন্দ। মণিকুন্তলা ও আশীষ খাজাঞ্চী আমাদের সঙ্গেই, কৃষ্ণের গাড়িতে ছিলেন। আলাপ করার সুযোগ হয়নি। কিন্তু একসঙ্গে দেখা হতেই আর পোশাকী আলাপের প্রয়োজন পড়ল না। সবাই নিজেরা নিজেদের চিনে নিলাম। প্রথমে স্যার অমিত কুমার দে-র তোলা ছবি ও কবিতায় সেজে ওঠা ক্যালেন্ডারের উদ্বোধন ঘটে গেল সবার হাতে হাতে। আয়োজক অমিত কুমার দে ও পপি দে-এর দেওয়া স্বাগত প্যাকেটটিতে কেক, চকলেট, বিস্কুট, ঝুড়িভাজার সাথে সবার জন্য একটা করে ক্যালেন্ডার রাখা হয়েছে। প্রতিবার ওনাদের এই অভিনব ভাবনা আমাদের অপেক্ষায় রাখে, এবার কী আছে? 

চড়ুইভাতি যখন সাহিত্যের, তখন সাহিত্য ছাড়া এই আয়োজন সম্পূর্ণ হতেই পারে না। এখানেই অনাড়ম্বর কিন্তু প্রবল আন্তরিকতায় প্রকাশ পেল রণজিৎ কুমার মিত্র স্যারের বই 'স্মৃতি দিয়ে ঘেরা'। বইটি সহজ উঠোনেই ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর তুমুল আড্ডার পর দুপুরের খাওয়া। তারপরেই শুরু হল সাহিত্য পাঠ, গান এবং অবশ্যই দেদার আড্ডা। র্সূযাস্ত দেখার সময় এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষগুলো নিজেদের মতো থেকেও সবার মতো। অসংখ্য গ্রুপ ছবি যেন সূর্যের সবটুকু আলো শুষে নিয়ে নিজেকে রঙিন করে তুললো। অন্ধকার ছেয়ে নেবার আগে আমরা ঘরমুখী। সেও শুধু অল্প সময়ের জন্য। আবার চা খেতে ডাইনিং এ এসে রাতের খাওয়া পর্যন্ত আড্ডা। ভালোবেসে গান গাওয়া কাকে বলে পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়কে না দেখলে অনুভব করা যাবে না। সহজ সরল এই মানুষটি সামান্য অনুরোধেই হাসিমুখে গেয়ে ওঠেন পছন্দের গানটি।

আসলে চড়ুইভাতির এই দুটো দিন আমি নিজেকে সমৃদ্ধ করি। মুক্তি চন্দের মতো ব্যক্তিত্ব যেখানে রয়েছেন সে স্থানই তো আমার জন্য পুণ্যভূমি। প্রশান্ত নাথ চৌধুরী, রণজিৎ কুমার মিত্রের মতো মানুষ যাঁরা একটি অন্য উচ্চতায় বিরাজ করেন, তাঁদের সঙ্গে এক অঙ্গনে মিলিত হওয়া আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষের জন্য বড় গর্বের। আর অমিত কুমার দে - তাঁকে সহজেই পাই বলে হয়ত তার ব্যাপ্তি আমরা কখনও সঠিকভাবে অনুভব করতে পারি না। এক চিকরাশি সাহিত্য অনুষ্ঠান আর চিকরাশি চড়ুইভাতিতে এলে তাঁর বিরাট ব্যক্তিত্ব আর বিস্তৃত জগৎ সম্পর্কে জানা যায়। তাঁর প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। এই বিরাট সাহিত্যমহলে তিনি আমার পরিচিতি এনে দিয়েছেন, কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন।

দ্বিতীয় দিনে আড্ডার ফাঁকে মোহর শোনালেন অমিত কুমার দে স্যারের কবিতা 'জ্যোৎস্না রাভার গান' এবং তার ইংরেজী অনুবাদ। অসাধারণ উচ্চারণ ও মাধুর্যময় কন্ঠে আমরা অভিভূত। মোহর নিজেই অসামান্য বিদূষী। তাঁর উপস্থিতিই মর্যাদাপূর্ণ। 
দ্বিতীয় দিনে আমাদের সারপ্রাইজ দিতে হাজির খ্যাতনামা রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী নীপা ঘোষ ভট্টাচার্য, আমাদের সবার প্রিয় নীপাদি। হাসিখুশি প্রাণবন্ত মানুষটি পর পর কয়েকটি রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়ে সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখলেন। সে ঘোর কাটতে না কাটতেই দেখি তিনি বিদায় নিচ্ছেন। আবার ফিরে যাচ্ছেন নিজের সংসারে। এসেছিলেন কয়েকটি মাত্র ঘন্টা আমাদের উপহার দিতে।
দ্বিতীয় দিনের আর একটি বিষ্ময় সৌমিতা ভট্টাচার্য, চম্পা ভট্টাচার্যের কন্যা। কী অসাধারণ গাইলেন! কী অবলীলায় কন্ঠে খেলা করছে সুরের জাদু! আমরা অভিভূত। আমরা নাট্যশিল্পী চম্পা ভট্টাচার্যের প্রতি কৃতজ্ঞ, এমন অসামান্য মুহুর্ত উপহার দেবার জন্য। 
তৃতীয় দিনে ব্রেকফাস্টের পর যার যার নিজস্ব বিচরণক্ষেত্রে ফেরার পালা। একটা মনখারাপের ছায়া সবার মুখে। তবু দুটো দিনের আনন্দ আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে। এই যে ফেরার পালা বিষাদ বুকে, তবু আনন্দ। আনন্দ কিছু পাওয়ার। নিজেকে কতটা মেলে ধরতে পারি সেটা বড় কথা নয়, এইসব বটবৃক্ষসম মানুষদের সান্নিধ্যে থেকে নিজেকে প্রতিবার সমৃদ্ধ করছি এটাই আনন্দ। এই আনন্দ নিয়েই ঘরমুখো হই।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri