সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
02-December,2022 - Friday ✍️ By- গৌতম চক্রবর্তী 306

গ্রামীণ পর্যটনের আদর্শ পাহাড়ি গ্রাম চুইখিম/গৌতম চক্রবর্তী

গ্রামীণ পর্যটনের আদর্শ পাহাড়ি গ্রাম চুইখিম
গৌতম চক্রবর্তী
========================================

------------------------------------------------------------
চুইখিমে লিম্বু জনজাতির সঙ্গে রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন
--------------------------------------------------------------------------------
তরাই ডুয়ার্সে ঘুরতে ঘুরতে, চলতে, চলতে ঘুরেছি কত জনপদ, গ্রাম গঞ্জ। এখনও তার কতকিছুই অজানা। প্রায় প্রতি উইক এন্ডে বাইরে বেড়িয়ে পড়ি। এইরকমভাবেই ঘুরতে ঘুরতে বছর দুয়েক আগে একদিন পৌঁছে গিয়েছিলাম লিম্বু জনজাতিদের ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম চুইখিমে। চুইখিমের বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের লিম্বু জনজাতির ছাত্র ছাত্রীদের বাংলা ভাষায় রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনের দূর্লভ ঘটনার সাক্ষী হতে। সৌজন্যে অজন্তাদি। অজন্তা সিনহা যিনি বহু কর্পোরেট জগত, সংবাদমাধ্যম, বিভিন্ন এনজিওদের সঙ্গে জীবনের অর্ধেকটা সময় কাটিয়ে পর্যটন সংগঠক রাজ বসুর সহযোগিতাতে চুইখিমে লিম্বু জনজাতির ছাত্র ছাত্রীদের শিক্ষাবিস্তার, বিদ্যালয় পরিচালনা এবং সমাজসংস্কারের কাজে নিভৃতে ব্রতী ছিলেন। অজন্তাদি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন লিম্বু স্কুলের রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপনের অনুষ্ঠানে। বাংলাভাষার প্রতি টান এবং ভালোবাসা থেকেই ইংরেজী এবং বাংলা ভাষায় রবীন্দ্রনাথকে মিলিয়ে দেবার প্রচেষ্টাতে শুরু হল এক লড়াই। প্রথমে এককভাবে লড়াই শুরু করেছিলেন অজন্তা দি, তারপর বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের সহযোগিতায় চুইখিম ওয়েলফেয়ার সোসাইটিও শিক্ষাবিস্তারে চেষ্টা করে চলেছে অবিরত। গ্রামের ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে চেষ্টার ত্রুটি রাখছে না। বহুদূর থেকে ছাত্রছাত্রীরা প্রাকৃতিক দূর্যোগ মাথায় করে বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসে যে সেটা নিজের চোখে দেখে এসেছিলাম। একই পথের ছিলেন পথিক ছিলেন শিক্ষকেরাও। হয়তো এতদিনে অনুমোদন পেয়ে গেছে স্কুলটি। অসাধারণ রবীন্দ্রসংগীত গান অজন্তাদি। পরিকল্পনা হয়েছিল ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা হবে। বাংলার সঙ্গে ইংরেজীতে স্ক্রিপ্ট তৈরি করে গান, নাচ, আবৃত্তি, ভাষ্যপাঠ এর এক যুগলবন্দী। শুরু হল মাসাধিককাল ব্যাপী রিহার্সাল। প্রথমে শিক্ষক শিক্ষিকাদের ট্রেনিং এবং তাদেরকে নিয়ে স্ক্রিপ্ট তৈরি। তারপর ছাত্র ছাত্রীদের ট্রেনিং। অবশেষে এক অসাধারণ, প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান পরিবেশিত হল সম্পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবেশে যে অনুষ্ঠানের সাক্ষী রইলাম আমরা সপরিবারে। ফিরে আসার সময় সাক্ষী ছিলাম এক অবিস্মরণীয় মুহুর্তের আর ভাবছিলাম কেন রবীন্দ্রনাথ দেশ, কাল ও জাতির গন্ডী ছাড়িয়ে আজও সার্বজনীন। চুইখিম বাংলার এমন একটি গ্রাম যেখানে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে এখানকার কোন সম্পর্ক আজও রচিত হয়নি। নেপাল থেকে আগত মানুষজন মূলত গ্রামটা গড়ে তোলেন। তাই নেপালী ভাষাই যে তাদের মাতৃভাষা হবে সেটাই স্বাভাবিক। স্কুলে পড়ানোর মাধ্যম ইংরেজি ভাষা। যদি ভাব বিনিময়ের প্রধান মাধ্যম ভাষা হয় তাহলে বাংলা এখানে পুরোপুরি ব্রাত্য। তবে বাংলা ব্রাত্য হলেও কোনো বিরূপতা নেই। কারণ এখানে বাংলা ভাষা শেখানোর কথা কখনো কেউ ভেবেছেন বলে জানা নেই।
বাগরাকোট ছুঁয়ে চুইখিমের পথে
এবার আবার সুযোগ ঘটে গেল কাফের যাওয়ার পথে লিম্বুগ্রাম চুইখিমে দুই রাত কাটানোর। সেবক পাহাড় পার হলেই মংপং নেচার রিসর্ট। সবুজের কোলে অরণ্য ছায়ায় তিস্তার কোলে চড়ুইভাতির দিনে জায়গা মেলা ভার। অরণ্যের ফাঁকফোকর দিয়ে স্পষ্ট দেখা যায় নীল সবুজে মেশা পাহাড়শ্রেণী। পায়ে চলা পাকদন্ডী পথ এঁকেবেঁকে এলেনবাড়ি, ওয়াশাবাড়ি চা বাগান হয়ে পৌঁছে গেছে বাগরাকোট। সামনে পেছনে যেদিকে চোখ যায় সবুজে সবুজ। ছাতার মত নিশ্চুপ দাঁড়ানো শত শত ছায়াগাছ। হঠাৎ করে দুরন্ত বেগে ছুটে চলে যায় এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেন চলে যাবার পর রেলপথ জুড়ে আবার নিস্তব্ধতা। গাছের নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে হাঁড়িয়া পিপাসুরা। বিক্রেতা মদেশিয়া বা নেপালি মেয়েরা। তরাই, ডুয়ার্স এর চা বাগানের সর্বত্র দেখতে পাওয়া যায় এই দৃশ্যাবলী। চুইখিম। জায়গাটার নাম হয়তো অনেকেরই অজানা। ডুয়ার্সের বাগরাকোট থেকে পাহাড়ি পথ বেয়ে অনেকটা উপরে উঠলে দেখা মিলবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই জায়গাটির। চা বাগানের বাবুদের ঘরবাড়ি, ঝুপড়ি দোকানের ভেতর দিয়ে ফৌজি ব্যারাক হয়ে বাগরাকোটের গায়েই অতীতের কাঠের ছোট্ট চুনাভাটি বাংলো ছুঁয়ে চুইখিম যাওয়া যায়। শিলিগুড়ি থেকে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে সেবকের করোনেশন সেতু পেরিয়ে গেলে বাগরাকোটের মিনা মোড়। সেখান থেকে বাঁ দিকে বেঁকে গেলে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া বাগরাকোট বাজারের চৌপথিতে পৌঁছে যাওয়া যায়। বাগরাকোট বাজার থেকে ডানদিকের পথ ধরে বাঁকে বাঁকে ১৫ কিলোমিটার এগোলেই চুইখিম। চুইখিমের সব থেকে কাছের সমতল এবং তুলনায় উন্নত জীবনযাপন যেখানে সেটা বাগরাকোট। তারপর ওদলাবাড়ি এবং একটু পরে মালবাজার। পাহাড়ি পথ বেয়ে গাড়িতে চুইখিম থেকে বাগরাকোট আসতে সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। নিজস্ব গাড়িতে অনেকেই আসতে পারেন না। সেক্ষেত্রে সার্ভিস গাড়ি ভরসা। দূর্গম রাস্তায় আজও চলাফেরায় বড় কষ্ট এখানকার মানুষের। তবে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের বিকল্প হয়ে উঠবে নব নির্মীয়মাণ সড়ক। পর্যটকেরা পাহাড়ের ঢাল বেয়ে তৈরি প্রশস্ত সড়ক ধরে তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে যাবেন। এই সড়কটি তৈরি হলে বাগরাকোট, চুইখিম সহ প্রতিটি এলাকায় পর্যটনে বিপুল জোয়ার আসবে।
-----------------------------------------------------------------------------
বাগরাকোট থেকে নাথুলা বিকল্প সড়কপথে চুইখিম
-----------------------------------------------------------------------------
এই চুইখিম পেরিয়েই অদূর ভবিষ্যতে চলে যাওয়া যাবে ইন্দো-চিন সীমান্তের নাথুলাতেও। আসলে একেবারে নিঃশব্দেই কালিম্পং জেলার পাহাড় জুড়ে বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে। ডোকালাম, নাকু লা, নাথু লা-র মতো ইন্দো চীন সীমান্তগুলোর সুরক্ষার স্বার্থে মূলত সামরিক প্রয়োজনেই নতুন করে দুই লেনের সড়ক তৈরি হচ্ছে। আগামী দিনে এই সড়কপথেই পেীঁছে যাওয়া যাবে সিকিমের নাথু লা-য়। কেন্দ্রীয় সরকারের ভূতল পরিবহণ মন্ত্রকের অধীনস্থ ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল)-এর তত্ত্বাবধানে ডুয়ার্সের বাগরাকোটের চাঁদমারি থেকে ইন্দো-চিন সীমান্তের নাথু লা পর্যন্ত প্রায় ২৫০ কিমি দীর্ঘ বিকল্প জাতীয় সড়ক ৭১৭-এ নির্মাণের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। সমস্ত নিয়মকানুন মেনে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ একাধিক ল্যাবরেটরিতে নির্মাণ সামগ্রী পরীক্ষার পর ব্যবহার করা হচ্ছে। এনএইচআইডিসিএল এর নিজস্ব এবং পাটনা শহরের র্যাডিকন নামের দুটি গবেষণাগারে পরীক্ষা করিয়ে সড়ক নির্মাণকাজের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। শুরুর দিকে কালিম্পং জেলার কয়েকটি পাহাড়ি গ্রামে জমিজট ও বন দপ্তরের অনুমতির জন্য কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও ইদানীং অত্যাধুনিক মেশিনপত্র কাজে লাগিয়ে প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে চলেছে নির্মাণ কাজ। নতুন এই সড়কটি ওদলাবাড়ি বাগরাকোটের মধ্যবর্তী চাঁদমারি গোলাই থেকে একটি উড়ালপুলের মাধ্যমে রেললাইন পেরিয়ে বাগরাকোট চা বাগান, চুইখিম, নিমবং, বরবট, পাবরিংটার, দারাগাঁও, লোলেগাঁও প্রভৃতি পাহাড়ি গ্রাম হয়ে সিকিম সীমান্তের ঋষিখোলা পর্যন্ত পৌঁছানোর পর পেডং, গ্যাংটক হয়ে নাথু লা পর্যন্ত যাবে। সবমিলিয়ে সড়ক নির্মাণের আগামী দেড় বছরের সম্ভাব্য সময়সীমা পেরোনোর অপেক্ষায় এখন থেকেই দিন গুনছেন এই এলাকার বাসিন্দারা। পর্যটকরা যেমন এই পথে সিকিমে যেতে পারবেন, তেমনই সেনাবাহিনীর ভারী গাড়িও যাতায়াত করতে পারবে। ইন্দো-চিন সীমান্তের নাথু লা পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে খুব সহজেই। চুইখিমের প্রায় সব মানুষই বাইরে থেকে আসা। আটের দশকে একবার ভারী বন্যা হয়েছিল। পূর্বাঞ্চলের নেপাল এবং সিকিম তাতে খুব বেশিরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মূলত সেইসময় সেখানকার মানুষেরা এসে থাকতে শুরু করেন ব্যাপক হারে।
রোদ বৃষ্টি মেঘের দেশে আলোছায়ার খেলা
লাভা, লোলেগাঁও এর নাম অনেকে শুনেছেন। কিন্তু চুইখিম, সন্ন্যাসীদাঁড়া, বরবট, কোলবং, চারখোল এখনো নতুন। কালিম্পংয়ের পাহাড়ি গ্রাম চুইখিমের দুই পাহাড়েই গ্রামের বিস্তার। কোন পাহাড়ে রোদ, কোনটায় বৃষ্টি। মেঘের দেশে আলোছায়ার খেলা। নিচে ছবির মতো পাহাড়ি গ্রামের ছোট্ট ছোট্ট ঘর। অনেক দূরে হালকা সুতোর মতো জাতীয় সড়ক। রূপোলি সুতোর মতো পাহাড়ি নদী। ডুয়ার্স এবং পাহাড়ে পর্যটকেরা অনেক সময়ে অফবিট পর্যটন কেন্দ্র খোঁজ করেন। চুইখিমে সেই সাধ পূরণ হবে। চুইখিমের এই সৌন্দর্যের কথা জানতে পেরে এক হাল্কা শীতসফরে বেড়িয়ে পড়লাম চুইখিমের উদ্দেশে। পাহাড়ের খাদ, রংবাহারি স্যালভিয়া আর রডোডেনড্রন এর বাগান, পাহাড়ি পাখি দেখে দিলখুশ। শুকনো পাতা ঝরে পড়া নিঝুম পরিবেশের ঘুমিয়ে পড়া শান্ত নির্জন পাহাড়ি জনপদ চুইখিম এখন অ্যালকোহল ফ্রি জোন হিসেবে খবরের কাগজ এবং টিভির পর্দায় জায়গা করে নিয়েছে। অনেক বাধা-বিঘ্ন, ঝগড়া এবং মারপিট শেষে মানুষজন উপলব্ধি করেছে মদ্যপানের অভ্যাস গড়ে উঠলে নিজেদেরই ক্ষতি। তাই গ্রামীণ পর্যটন এবং গ্রামীণ হস্তশিল্প নতুন ভাবনার জোয়ারে ভাসছে। তবে কিছু পর্যটনপ্রিয় মানুষ বেড়াতে এলেই কারণসুধায় নিজেকে জারিত করতে ভালোবাসেন বলে আড়ালে আবডালে এখনো কেউ কেউ বাড়তি রোজগারের কারণে মদ্যপানকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে অভিযোগও আছে। চুইখিমে ঠান্ডা বেশি না পড়লে লেপ আর কম্বল দরকার পড়ে না। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে অলসতা কাটানো যায়। স্থানীয় ডোল্লে খুরশিয়ানি, লঙ্কার চাটনি আর বাহারি গরুর খাঁটি দুধ থেকে তৈরি গাওয়া ঘি সহযোগে খাবার বাড়তি আকর্ষণ। মাত্র ৭৫০ টাকাতেই জনপ্রতি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে চুইখিমে। চুইখিমে পাওয়া যাবে খাঁটি দুধ, দই, মাখন, ফলের রস এবং জৈব সারের তৈরি শাকসবজি। চুইখিমের সকাল-সন্ধ্যা সেজে ওঠে অপরূপ সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তে। নদীর কলকল ধ্বনি থেকে পাখির কাকলিতে প্রাণ ভরে ওঠে। ঋতুতে ঋতুতে প্রকৃতি এখানে রূপ বদলায়। গ্রামের সরল নিস্তরঙ্গ জীবনযাত্রা সেই প্রকৃতির পদচিহ্ন ধরে এগিয়ে চলে ধীর গতিতে। চুইখিমে দেখেছিলাম এই গ্রামের প্রায় সবাই গোর্খা, তামাং, লিম্বু সম্প্রদায়ভুক্ত। বেশ কয়েক ঘর লেপচা এবং ভুটিয়া থাকলেও থাকতে পারে। এখনো এই অঞ্চলের মানুষজন সহজ সরল। বলাই বাহুল্য, সকলেই নেপালিভাষী। ধর্মের দিক থেকে হিন্দুরা সংখ্যায় কিছু বেশি এবং বৌদ্ধ আছে। এখন গ্রামে তিনশর বেশি ঘর। গ্রাম আস্তে আস্তে বড় হয়। এখন জঙ্গল অনেকটা দূরে।
-----------------------------------------------------------------------------
চাষবাসের বাণিজ্যিকীকরণে অর্থনৈতিক পরিবর্তন
-----------------------------------------------------------------------------
অল্পেই খুশি এবং তৃপ্ত চুইখিমের জনজীবন। একজন ডাক্তার বসেন এখানে। এর বাইরে চিকিৎসার জন্য গ্রামের মানুষের ভরসা মালবাজার। একটা প্রশংসনীয় রীতি এইসব পাহাড়ি গ্রামের মানুষ নিজেরাই মেনে চলেন। সেটা হলো চাষে রাসায়নিক সার বর্জন। জৈব সার এদের প্রধান হাতিয়ার। কৃষিক্ষেত্রে যে ফসল এবং শাকসবজি উৎপাদন করা হয় তা স্বাস্থ্যগুণ বজায় রাখার ক্ষেত্রে অতি সহায়ক। প্রবীণ মানুষদের কথায় চাষবাসের বাণিজ্যিকীকরণের দিকটা পরিষ্কার হলো। চুইখিম এক্ষেত্রে সবেমাত্র শৈশবে পা রেখেছে বলা যায়। তাঁরা জানালেন, গ্রামের সকলেরই নিজস্ব জমি আছে। সেই জমি চাষ করে অন্নসংস্থান ছিল গ্রামের প্রথম দিককার ছবি। ইদানিং মানুষ তার জমির ফসল বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে পরিবারের আয় বৃদ্ধি করতে শিখেছে। বাড়ির খাবার জন্য ছাড়া বাকিটা তারা বাজারে বিক্রি করছেন অনেকেই। কৃষির সঙ্গে কিভাবে হলেও বাণিজ্যের একটা যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে। এর সঙ্গে গরু ছাগল পালন, মুরগির খামার, পোলট্রি বা মধু চাষের ফলে চুইখিমের অর্থনীতি কিছুটা চাঙ্গা হচ্ছে। বাণিজ্যক্ষেত্রে আরও কয়েকটি পণ্য হল তেজপাতা, বড় এলাচ, গোলমরিচ এবং ফুলঝাড়ু। এখানকার মাটিতে আদার ফলন ইদানিং তেমন ভালো হচ্ছে না। যদি চাষের উপকরণ ও ট্রেনিং এর ব্যবস্থা সরকারি বা বেসরকারিভাবে করা যায় তাহলে আরো উপকৃত হবেন গ্রামবাসী এমনটাই মনে করেন এখানকার সচেতন মানুষ। রাসায়নিক সারের মতোই প্লাস্টিক বর্জনেও সচেতন চুইখিমের মানুষ। গ্রামের কোথাও প্লাস্টিকের প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখা যায় না। বড় শহরে যা যেখানে সেখানে চোখে পড়ে। সিকিমের পথে যেতে যেতে মাঝে মাঝেই চোখে পড়ে প্লাস্টিকের চিপস বা চানাচুর এর প্যাকেট, কোল্ড ড্রিংসের বোতল। ড্রাইভাররা বলেন এসব টুরিস্টদের কান্ড। স্থানীয় গ্রামবাসীরা কিন্তু সচেতন। তারা প্লাস্টিক লোকালয় থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে জ্বালিয়ে দেন। মোদ্দাকথা, শিক্ষার আলো সেভাবে না পেলেও প্রকৃতিকে আবর্জনা মুক্ত করার প্রক্রিয়াতে ওরা যে আমাদের শিক্ষিত সমাজের থেকে এগিয়ে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri