সহজ উঠোন

রেজিস্টার / লগইন করুন।

সব কিছু পড়তে, দেখতে অথবা শুনতে লগইন করুন।

Sahaj Uthon
02-December,2022 - Friday ✍️ By- দেবলীনা দে 222

কমলাময় একটা দিন/দেবলীনা দে

কমলাময় একটা দিন
দেবলীনা দে
=================

শীত পড়লেই পাহাড়ের সৌন্দর্য্য যেন আরও বেশি খোলতাই হয়! আমার মন তো আবার সুযোগ পেলেই উড়ুউড়ু! করোনা কালে একপ্রকার পায়ে বেড়ি পরানো ছিল, তারপর যেই তার দাপট কমতে শুরু করতেই মন ফুড়ুৎ। খুব বেশি দূরে যাওয়ার তো সাহসে নেই তাই পাহাড়ের কোলে শান্ত গ্রাম যেন এক টুকরো স্বর্গ। শহর পেরিয়ে সেবকের বুক চিরে ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের হাত ধরে এগিয়ে চললাম। খানিকটা এগিয়েই ছোট্ট জনপদ বিরিকদাড়া, বেশ কয়েকমাস আগেই এর কাছে ধস নামে তাই রাস্তাটা এবড়োখেবড়ো, এবার সেখান থেকে বাঁ দিকের রাস্তা ধরলেই সরু পথ, উপরে উঠছি তো উঠছি, হঠাৎ একটা ময়ূর প্রায় রাজার মতো পথ আটকে দাঁড়িয়ে আছে, সূর্যের আলোয় তার রূপলাবণ্য শুধুই মুগ্ধতা ছড়ায়। আমাদের দেখেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে সেগুনের বনে হাঁটা দিল। দুপাশে সবুজ বনানী মধ্যিখান দিয়ে পিচেমোড়া রাস্তাটা সাপের শরীরের মতো তেলতেলে। রাস্তা ভীষণ ভালো তাই এতটা উচ্চতায় উঠে আসতে তেমন সময় লাগল না। গাড়ির জানালা দিয়ে নিচে তাকাতেই বর্ষার জলে পুষ্ট তিস্তা খরস্রোতা নজরে এল। সিটং গ্রাম পঞ্চায়েত তিনটি ভাগে বিভক্ত, তার আওতায় সেল্পু পাহাড়।খানিক যেতেই কমলালেবুর গ্রাম সিটং। সিটং কমলালেবুর জন্য জনপ্রিয়। এই কারণে এই জায়গাটি অনেকের কাছে পরিচিত। শীতের সময় কেউ এখানে বেড়াতে এলে চোখে পড়বে সবুজ পাতার মাঝে আলো করে আছে কমলালেবু। তবে দেখে লোভ সম্বরণ করতে হবে বৈকি। কারণ হাত দিতে পারবেন না।হোমস্টে লাগোয়া বাগান থেকে মিলতে পারে।ছিমছাম সাজানো ঘরবাড়ি। নানা রঙের তুলির টানে দেওয়ালে যা উজ্জ্বল। দূরে পাহাড়ে মেঘেদের আঁতুরঘর।
গাড়ি যত এগিয়ে চলছে চারিদিক শুধুই কমলা, গাছগুলো ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে, কিন্তু কেবল নয়ন সুখ প্রাপ্তি। কমলাবাগান লাগোয়া বাড়ির সদস্যদের কড়া নজর। গাড়ি থেকে নেমে সেলফি, গ্ৰুপফি তোলা হল। রোদের আলোয় এদের সোন্দর্য্য আরও বেড়ে গেছে। এবার আবার গাড়িতে চেপে এগিয়ে যাওয়ার পালা। সামনে যতদূর চোখ যায় শুধুই সবুজ ক্যানভাস যদিও হালকা মেঘেদের আনাগোনা থাকে খানিকটা ঝাপসা হচ্ছে কখনো সখনো। প্রতিটি বাড়ির সামনে গ্ল্যাডিওলাস, এজেলিয়া, এন্থোরিয়াম ... আরও কত অজানা রঙিন ফুল আলো করে আছে। এ যেন ছোটবেলার ড্রয়িংবুক। গ্রামের মানুষজন সাংসারিক কাজে মগ্ন। কেউ কেউ শহরে যাওয়ার জন্য গাড়ির জন্য অপেক্ষারত। এ অঞ্চলের পাহাড়ের গায়ে ফার্ন মখমলি কার্পেটের মতো, তা কেটে বান্ডিল বানিয়ে শহরে জোগান দেওয়া হয়। নানারকম ফুলসাজসজ্জায় তা ব্যবহার করা হয়। এটি উপার্জনের একটি পথ। পাহাড়ি গ্রামগুলির মানুষজন ভীষণ পরিশ্রমী হয়ম দূরদূরান্ত তারা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করে।নানারকম প্রতিবন্ধকতা নিত্যদিনের সঙ্গী।হাঁটতে হাঁটতে আমরা প্রায় সিটং বাজার পৌঁছে গেছি, সেখান থেকে একটু এগিয়ে দেখি নানা রঙের লুংদার হাওয়ার তালে তাল মিলিয়ে দুলছে। কাছে যেতেই দেখি ছোট্টো একটি বৌদ্ধ মনাস্ট্রি। ভিতরে যেতেই বুদ্ধসহ তার তার সতীর্থদের তিনটি সুন্দর মূর্তি দিয়ে সাজানো। সকালের প্রার্থনা সম্পন্ন হয়ে গেছে, ধূপের গন্ধে চারিদিক পবিত্রতার ছাপ।
এবার আমরা গাড়ি গিয়ে উঠলাম। গাড়ি ছুটছে আহাল সানরাইজ ভিউ পয়েন্টের দিকে। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে পাথুরে পথ ধরে উঁচু টিলার উপর দাঁড়ালে একদিকে কালিম্পঙ,আবহাওয়া ভাল থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর ঠিক বিপরীতে সেবক পাহাড় সহ শিলিগুড়ির কিছু অংশ, তবে আমাদের তেমন কিছুই দেখার সৌভাগ্য হয়নি কারণ আমরা মেঘেদের দলে ভিড়ে গিয়েছিলাম। এখানে পাথরে বসে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া টিফিন সকলে মিলে খেয়ে নিলাম। দুপাশে চা বাগান, এটি সেল্পু চা বাগান, পাহাড়ের ঢালে শ্রমিকরা কর্মরত।হঠাৎ নজরে এল চা গাছের উপরে সুন্দরী প্রজাপতি বসে বিশ্রাম নিচ্ছে। দেখেই মোবাইলে ক্লিক। সেখান থেকে আমরা রওনা দিলাম নামথিং লেকের উদেশ্যে, দুপাশে সিঙ্কোনা গাছ, এখানে কুইনাইন তৈরি হয় স্থানীয় কারখানায়। আমরা এসে পৌঁছলাম নামথিং লেকের গেটের কাছে। এটি হল লুপ্তপ্রায় প্রাণী সালামান্ডার-এর আদি বাসভূমি। এটি প্রজননের সময় তাই বন্ধ রয়েছে। এখানে তারা নিজের মতো বংশপরম্পরায় রয়েছে, এদের রাজত্ব, লেকের জলে সাতাঁর কাটে, খেলাধুলা করে।চারিদিকে ধোবিগাছ দিয়ে পরিবেষ্টিত। ভীষণ স্যাঁতসেতে। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য থাম চা বাগান, এখানকার চা বাগানগুলিতে দার্জিলিং চা তৈরি হয়। বাগানকে সঙ্গী করে উঁচু টিলার উপর ১৯৯৪ সালে তৈরি হয়েছে একটি মনাস্ট্রি। এখানকার জনবসতির মধ্যে অধিকাংশ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এই থাম চা বাগানেই রয়েছে ওপর একটি মনাস্ট্রি যার বয়স ২০০ বছরের অধিক এবং এই মনাষ্ট্রির বিশেষত্ব হলো সম্পূর্ণ মাটির তৈরী। তবে বর্তমানে মনাস্ট্রিটির মাটির দেওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকায় স্থানীয় মানুষদের সহায়তায় বাইরে থেকে গার্ডওয়াল দিয়ে রক্ষনাবেক্ষণ প্রচেষ্টা চলছে। মনাস্ট্রির নাম পেরিং মনাস্ট্রি, ভেতরে প্রবেশ করতেই মনে হল কত বছর পিছিয়ে গেলাম। মাটির দেওয়ালে নানা রঙের তুলির টানে বৌদ্ধ স্তুতি বা বিভিন্ন রকম বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর অবয়ব আঁকা হয়েছে,আদিম অনুভূতি।
সেখান থেকে বেরিয়ে আমরা রওনা দিলাম অপর একটি পাহাড়ী চা বাগানের উদেশ্যে যার নাম মহালদিরাম।এই চা বাগানটির বিশেষত্ব সারা বছর কুয়াশার চাদরে আচ্ছাদিত।পাহাড়ের ধাপে ধাপে চা বাগিচা তার উপর দিয়ে কুয়াশার অবিরত বিচরণ।সেখানে দেখি ছোট্ট চা-এর দোকান সঙ্গে ধোঁয়াওঠা মোমো।পাহাড়ে এসে মোমোর স্বাদ নেব না তা কি হয়।ঠান্ডা হিমেল হাওয়ার ফিসফিস,এ প্রান্ত হতে ওপ্রান্ত দোলা দিয়ে যায়।বেলা গড়িয়ে দুপুর, এবার যে ফিরতে হবে।
সারাদিন কাটিয়ে এবার ঘরে ফেরার পালা।দুপুরের খাবার গাড়ি দাঁড় করিয়ে সেরে নিলাম। একটা সুন্দর দিন যেন বেশ কয়েকদিনের অক্সিজেন নিয়ে ফিরে এলাম।

আপনাদের মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴
software development company in siliguri,best
                          software development company in siliguri,no 1 software
                          development company in siliguri,website designing company
                          in Siliguri, website designing in Siliguri, website design
                          in Siliguri website design company in Siliguri, web
                          development company in Siliguri