উত্তরবঙ্গের লোকজীবনে খাদ্য ও পানীয়/ প্রমোদ নাথ
উত্তরবঙ্গের লোকজীবনে খাদ্য ও পানীয়/ প্রমোদ নাথ
উত্তরবঙ্গের
বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষদের, বিশেষত আদিবাসী মানুষদের, জীবন, সমাজ ও
সংস্কৃতি নিয়ে নিরলস কাজ করে চলেছেন প্রমোদ নাথ। ডুয়ার্স লোকসংস্কৃতি
আকাডেমিরও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তিনি। সম্পাদনা করেন লোকসন্সক্রিতি বিষয়ক
পত্রিকা 'লোকস্বর'। তাঁর করা ক্ষেত্রসমীক্ষা ও অনুসন্ধান আমাদের মাটির
কাছে, লোকজীবনের কাছে নিয়ে যায়। বছরের পর বছর গভীর নিষ্ঠায় এই কাজ করে একটা
অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি, নিজেই হয়ে উঠেছেন একটি নির্ভরযোগ্য
প্রতিষ্ঠান।
২০১৫তে প্রকাশ পেয়েছে তাঁর গ্রন্থ "উত্তরবঙ্গের লোকজীবনে
খাদ্য ও পানীয়"। ভূমিকা লিখেছেন বিশিষ্ট গবেষক বরুণ কুমার চক্রবর্তী। তাঁর
পর্যবেক্ষণ - এই গ্রন্থটি পাঠ করলে পাঠক "উপলব্ধি করবেন লেখকের পরিশ্রম ও
নিষ্ঠার ব্যাপকতাকে।" বরুণবাবু আরো লিখেছেন - "একটি জনজাতির সামগ্রিক পরিচয়
জানতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর তাদের উষ্ণ সান্নিধ্যে থাকতে হয়। যা
থেকেছেন প্রমোদ নাথ, তবে এখাঁনকার প্রায় ভূমিপুত্র হবার সুযোগে তিনি যে
অতিরিক্ত সুবিধা পেয়েছেন সে সত্য অনস্বীকার্য।"
"লিম্বুরা শূকরের মাংস,
মোষের মাংস খেলেও খেওয়াস গোত্রের লিম্বুরা মুরগির মাংস খান না, মেচরা খান
'জৌ' নামের মদ। এখন তার জায়গা করে নিয়েছে চোলাই মদ। লেপচাদের প্রিয় পানীয়
হল চুং বা তালেজ। রাভাদের ভাত তৈরির প্রণালীতে রয়েছে বিশেষত্ব। এঁদের একটি
প্রিয় শখ হল মাছ মারা। ভুটিয়াদের পছন্দ শুকনো খাবার, সে মাংসই হোক কিংবা
মাছ। এরা শূকরের রক্ত পান করে। তামাঙদের প্রধান খাদ্য ঢেরো। শিশুদের জন্য
এরা প্রস্তুত করেন চাম্বা। শেরপারা মাংসাশী, কিন্তু খাবারে প্রাধান্য পায়
সেদ্ধ আলু। শেরশাবাদিয়াদের প্রিয় খাদ্য মালপোয়া, চিতাই ও কলাইয়ের রুটি।
রাইওরা ভুট্টা ও মকাইয়ের রুটি কলাপাতায় রেখে পুড়িয়ে খান। এরা মাদক দ্রব্যের
ব্যবহারে অভ্যস্ত, তার নাম জার।..."
উত্তরবঙ্গের ২৬টি জনজাতির
খাদ্যাভ্যাস নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রমোদ নাথ - মেচ, লেপচা, রাভা, ভুটিয়া,
তামাঙ, শেরপা, লিম্বু, শেরশাবাদিয়া, রাই, নেওয়ার, টোটো, ডুকপা, গারো,
ধিমাল, মগর, রাজবংশি, গুরুং, ওঁরাও, মাহালি, লোহার, কামি, মাঝি, মাল
পাহাড়িয়া, সাঁওতাল, চাই, সারকি।
প্রমোদবাবু প্রাককথনে বলেছেন -
"জনবৈচিত্রের জাদুঘর এই উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত রয়েছে
বিভিন্ন প্রকার খাদ্য ও পানীয়। বেঁচে থাকার প্রাথমিক প্রয়োজনেই প্রত্যেকটি
মানুষের কাছে খাদ্যগ্রহণ করা, পানীয় গ্রহণ করা যেমন প্রয়োজন, তেমনিভাবে
বিভিন্ন জনগোষ্ঠী তাদের বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা খাদ্যবস্তু
গ্রহণেও সমানভাবে অভ্যস্ত। ... তবে একথা ঠিক যে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে
বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের খাদ্য ও পানীয়ের নান পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যায়
স্বাভাবিকভাবেই।"
বইটি পড়তে পড়তে মনে হয় খাদ্য ও পানীয়ের এই বিপুল বৈচিত্র যদি বিস্তৃত জনসমক্ষে বিপণনের ব্যবস্থা হত, বেশ হত।
------------------------------------------------
প্রকাশক : দি সী বুক এজেন্সি
প্রচ্ছদ : জয়ন্ত সী
মূল্য : ১০০ টাকা
আপনাদের
মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করুন ↴